অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ‘রিসেট বাটন’ মন্তব্য নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক

হ-বাংলা নিউজ: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি একটি বক্তব্যের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন। বিশেষ করে ফেসবুকে ‘রিসেট বাটন’ শব্দবন্ধটি এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

এতদূর আলোচনার বিষয়টি এই পর্যন্ত গড়িয়েছে যে, অনেকেই তাদের পোস্টে #স্টেপডাউনইউনূস ব্যবহার করছেন। টুইটারে এই হ্যাশট্যাগ বর্তমানে ট্রেন্ডিং।

সামাজিক মাধ্যমে ইউনূসের এই মন্তব্য নিয়ে তর্ক-বিতর্কে আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক এবং বিরোধী উভয় পক্ষই অংশগ্রহণ করছে।

মনে রাখতে হবে, মাত্র দুই মাস আগে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ‘স্টেপ ডাউন হাসিনা’ নামে একটি হ্যাশট্যাগ সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় হয়েছিল। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সরকার থেকে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ নেন অধ্যাপক ইউনূস।

কিন্তু কী এমন ঘটলো যে তিনি এত সমালোচনার শিকার হলেন? অনেকেই প্রশ্ন করছেন, ‘রিসেট বাটনে পুশ’ করলেই কি অতীত ভুলে যাওয়া সম্ভব?

রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, অনেকেই ভুল বুঝাবুঝির কারণে অথবা আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি সমর্থন থেকে ইউনূসের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।

‘রিসেট বাটন’ প্রসঙ্গের উত্থান

সম্প্রতি জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। সেখানে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি সরকার পতনের পর ঘটে যাওয়া নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন ছিল, ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভেঙে ফেলা এবং জাতীয় শোক দিবসের ছুটি বাতিলের বিষয়। প্রশ্নের উত্তরে তিনি সরাসরি কিছু না বলে জানান, “পুরনো দিনের কথা বলছেন। গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে। নতুন অবস্থানে আমাদের দেখতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ছাত্ররা বলেছে, আমরা ‘রিসেট বাটন’ পুশ করেছি; অতীত চলে গেছে। এখন নতুনভাবে আমরা গড়বো।”

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা

এই বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে বলছেন, অতীতকে সহজে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। কিছু মানুষ মনে করছেন, ইউনূস এই কথার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন।

ফেসবুকে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের একটি পোস্টও আলোচনা সৃষ্টি করেছে, যেখানে তিনি প্রশ্ন করেন, “রিসেট বাটনে চাপ দিলে নোবেল পুরস্কারের কী হবে?”

এছাড়া, অন্যান্য ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ইউনূসের ব্যক্তিগত অর্জন ও পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

লেখক তসলিমা নাসরিনও ‘রিসেট বাটন’ প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন, তিনি জানতে চেয়েছেন, ইউনূস যে তরুণদের কথা বলছেন, তাদের মধ্যে কারা এই বাটন টিপেছে।

মহিউদ্দিন আহমদের মন্তব্য

মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘রিসেট বাটন’ নিয়ে চলমান বিতর্ক আসলে ভুল বোঝাবুঝির ফল। তিনি মনে করেন, ইতিহাস ভুলে যাওয়ার মতো বিষয় নয়।

তিনি আরও যোগ করেন, ইউনূসের বক্তব্যের পেছনে একটি গভীর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট রয়েছে, যা কেউ কেউ বুঝতে পারছেন না।

অধ্যাপক ইউনূসের বক্তব্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে এবং এটি রাজনৈতিক ফায়দা লুটার প্রচেষ্টা বলেও মনে করছেন অনেকে।

এই পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘রিসেট বাটন’ নিয়ে আলোচনা চলছেই, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *