হ-বাংলা নিউজ: অর্থনৈতিক সংকটের কারণে শ্রীলংকায় দুই বছরের বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত হলো প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এবারের নির্বাচনে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করে জয়ী হয়েছেন বামপন্থি রাজনীতিবিদ অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে (৫৫)।
তবে দেশটি এখনও মুদ্রাস্ফীতি এবং অন্যান্য নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সোমবার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সামনে পাঁচটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রয়টার্স।
১. অর্থনীতি এবং সমৃদ্ধি
২০২২ সালে শ্রীলংকার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ মারাত্মক ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছিল, যা দেশটির অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে। মুদ্রাস্ফীতি ৭০ শতাংশে পৌঁছেছিল, তবে বর্তমানে তা ০.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকেকে টেকসই এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে ভারসাম্য আনতে হবে এবং বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে হবে।
২. আইএমএফ প্রোগ্রাম এবং ঋণ পুনর্বিন্যাস
জুন মাসে শ্রীলংকা প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপাক্ষিক ঋণ পুনর্গঠনের চুক্তি করেছে। ১২.৫ বিলিয়ন ডলারের আন্তর্জাতিক বন্ড পুনর্গঠনের খসড়া চুক্তিও সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে জিডিপির প্রাথমিক ভারসাম্য লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ঋণ পুনর্বিন্যাস
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং দিশানায়েকে বন্ডহোল্ডারদের সঙ্গে চুক্তিতে পরিবর্তনের জন্য আলোচনা করতে পারেন।
৩. ট্যাক্সেশন
আইএমএফের শর্তাবলির অধীনে একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পাস করা কঠিন হবে। দিশানায়েকে আইএমএফের সঙ্গে তাদের কর্মসূচি সামঞ্জস্য করতে, কর কমাতে এবং জনগণের রাজস্ব খালি করার বিষয়ে আলোচনা করবেন। তিনি স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং খাদ্যসামগ্রীর ওপর ভ্যাট অপসারণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তবে এর ফলে রাজস্ব ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রা প্রভাবিত হতে পারে।
৪. চাকরি এবং কল্যাণ
দিশানায়েকে রাষ্ট্রীয় কোম্পানিগুলোর লাভজনকতা বাড়াতে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ২০,০০০ নতুন চাকরি তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বিদ্যমান কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা করেছেন, তবে পাবলিক ফাইন্যান্সে ভুল পদক্ষেপ এবং বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের চাপ এই প্রতিশ্রুতিগুলোকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
৫. ভূরাজনীতি
নতুন প্রেসিডেন্টের সামনে কূটনৈতিক সম্পর্ক রক্ষা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দিশানায়েকে প্রতিবেশী ভারত এবং চীনের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য বজায় রাখতে এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের পরিকল্পনা ব্যক্ত করেছেন।
রোববারের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে, দিশানায়েকে ৪২.৩১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন, আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাজিথ প্রেমাদাসা পেয়েছেন ৩২.৭৬ শতাংশ ভোট। শ্রীলংকার সংবিধান অনুযায়ী, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে কোনো প্রার্থীকে মোট ভোটের ৫০ শতাংশের বেশি পেতে হয়, যার ফলে ভোট গণনা দ্বিতীয় দফায় গড়িয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে দিশানায়েকেকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির অভিনন্দনের জবাবে দিশানায়েকে লেখেন, “আপনার সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। দুই দেশের সহযোগিতা আরও জোরদার করার জন্য আমি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
