পোশাক খাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার প্রস্তুতি শুরু

হ-বাংলা নিউজ: পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি সাধারণত পাঁচ বছর পরপর ঘোষণা করা হয়, তবে এবারের অন্তর্বর্তী সরকার তা আগেই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য শিগগিরই কার্যক্রম শুরু হবে।

আজ বুধবার সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘শ্রম অসন্তোষ পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক আন্তমন্ত্রণালয় সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকের পর এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা।

বৈঠকে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এবং শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় উল্লেখ করা হয়, ১ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয়টি জেলার কারখানায় অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি অসন্তোষ গাজীপুরের ২৩৪টি এবং ঢাকা জেলার ১৬৮টি কারখানায় ঘটেছে। নারায়ণগঞ্জে ৩৯টি, ময়মনসিংহে ২১টি, চট্টগ্রামে ১৯টি, পাবনায় ২টি এবং নরসিংদীতে ১টি কারখানায় অসন্তোষের ঘটনা ঘটে।

ব্রিফিংয়ের শুরুতে শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান সূচনা বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহিল রাকিবও উপস্থিত ছিলেন। এরপর উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া জানান, বৈঠকে মোট আটটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার কাজ শুরু করা। তবে মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়নি। গত নভেম্বরে গ্রেডভেদে শ্রমিকদের মজুরি ৫৪ থেকে ৫৬ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। পোশাকশ্রমিকেরা সর্বনিম্ন ২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন।

বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুল্লাহিল রাকিব বলেন, “মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা কারখানায় গিয়ে শ্রমিকদের কথা শুনব এবং প্রয়োজনে ন্যূনতম মজুরি পর্যালোচনার উদ্যোগ নেব।”

বৈঠকে অন্যান্য সিদ্ধান্তগুলির মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ, শ্রমসংক্রান্ত অভিযোগ পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন, এবং বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধে ঋণ বা প্রণোদনার ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এছাড়া, মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ ও স্থানীয় পর্যায়ে শ্রম অসন্তোষ নিরসন কমিটি গঠন, ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদসহ বিভিন্ন কমিটি পুনর্গঠন এবং মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা হয়।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, “আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলব এবং সমস্যার সমাধান করব।”

শ্রমসচিব এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানান, পোশাক খাতে কিছু অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে, তবে তা সারাদেশে নয়, নির্দিষ্ট কিছু এলাকায়। শ্রমিকদের অনেক দাবিই যৌক্তিক।

ব্রিফিং শেষে, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় গাজীপুরের মাজার রোডে শিল্প সম্পর্ক শিক্ষায়তনে মতবিনিময় সভা করবেন শ্রমসচিব। এরপর তিনি বিভিন্ন কারখানা পরিদর্শন করবেন।

শ্রমিকদের ২৫টি দাবির মধ্যে রয়েছে মাসিক মজুরি ৭ তারিখে প্রদান, বার্ষিক ১০ শতাংশ বৃদ্ধি, অর্জিত ছুটির টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ, টিফিন বিল, নাইট বিল, দুপুরের খাবার বিল বৃদ্ধি, রোজার সময় অতিরিক্ত কাজের জন্য ইফতার বিল, পয়লা বৈশাখের ছুটি, বার্ষিক উৎসব ছুটি ১৪ দিন করা, বিশ্ব ইজতেমার মোনাজাতের দিন ছুটি, ঈদের ছুটি ১১ দিন করা, কারখানার কাজের সময় সকাল ৮টা করা, ৭০ শতাংশ পুরুষ কর্মী নিয়োগ এবং অনুপস্থিতি হলে চাকরি থেকে বাদ না দেওয়ার দাবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *