হ-বাংলা নিউজ: আমার নাম মিনা। মায়ের আদর আর বাবা-মায়ের স্নেহে একটি রাখালের ঘরে জন্ম নেয়া আমার জীবনের অভিজ্ঞতা হৃদয়ের গভীরে গভীর আঘাত দিয়েছে। যদিও জন্ম-মৃত্যুর এই পৃথিবীর খেলা অবিরত, আমি আমার জীবনের এই খেলার অংশ হিসেবে ইতিহাস লেখার জন্য এবং জানার জন্য আজকের এই লেখা লিখছি। ছোটবেলায় মায়ের আদর আর রাখাল বালকের মায়ায় আমি খুবই মুগ্ধ ছিলাম। মাঠে-ঘাটে, নদীর তীরে, খালের পারে অবাধে বিচরণ করতে করতে কচি ঘাস, গুল্ম, খইল ভুসি খেয়ে আমি স্বাস্থ্যবান হয়ে উঠেছিলাম।
কিন্তু হঠাৎ আমার মালিক আমাকে প্রাকৃতিক খাবারের পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ এবং ইনজেকশন দিয়ে আমার মাংশপেশী ফুলিয়ে তোলার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আমি পেশি শক্তিতে বলিয়ান হওয়ার আনন্দ লাভ করতে থাকি।
পাঠকরা কি জানেন? আমি শক্তি ও বলিষ্ঠতায় পূর্ণ হয়ে একদিন রাষ্ট্রের ফ্যাসিবাদী শক্তি উলটে দিতে সক্ষম হব।
কিন্তু কিভাবে? আমাকে উচ্চমূল্যে কিনে নিয়ে, কোনো অসৎ ব্যক্তি একটি বলদ প্রাণীর মতো আমার গলায় ছুরি চালিয়ে টুকরা টুকরা করে ফেলার পরিকল্পনা করছে। প্রতি বছর কত মানুষ প্রাণী জবাই করে জান্নাতের ফতোয়া দেয়, কিন্তু কোটি কোটি প্রাণীর হত্যা যদি বিধাতার ইচ্ছা হয়, তবে কেন প্রাণী হত্যা? নিজেদের হত্যা করে জান্নাতবাসী হওয়া কেন দোষের? আমরা নিরীহ প্রাণীই কি শুধু শিকার? মরতে হলে মরব, কিন্তু ইতিহাস সৃষ্টি করে বীরের মতো মরব এবং তোমাদেরকেও শাস্তি দেব। যাকে আদরে বড় করে লালন করেছো, ধিক সেই মহাজনকে, যে অর্থের সীমাহীন লোভে আমাকে কোরবানির হাটে নিয়ে গিয়ে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করছে। আমার কপোল বহিয়া অশ্রু হৃদয়ের কান্না কে বুঝবে?
প্রতিশোধের পালা শুরু হলো। ১৫ লক্ষ টাকার বোবা প্রাণীকে অধিক মূল্যে কেনার জন্য সবকিছু খুঁজতে গিয়ে তোমাদের সবার জ্ঞান ফিরেছে। চোর-মুনাফাখোর রাষ্ট্রের সম্পদ অপহরণের বিচার চাই, বিচার চাই আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে।
আমার নতুন মালিক আমাকে দালালের ছাদে নিয়ে মোটা রঙ্গীন দড়ি গলায় লাগিয়ে আনন্দে আত্মহারা। এখন আমার বুঝতে বাকি নেই, আমার জীবনের পরিণতি কি হবে? পরের দিন কোরবানি উপলক্ষে, বেলা ১০টার দিকে, আমার নতুন অসৎ মালিকের ছেলে ও পরিবারবর্গ আমাকে হাত-পা বেঁধে বুকের ওপর চাপ দিয়ে মাথা পশ্চিম দিকে ঘুরিয়ে শাস রুদ্ধ করে ধারালো ছুরি চালাতে শুরু করে, আর বলে আল্লাহু আকবর। আমার রক্ত কোরবাণীর জন্য পবিত্র হয়ে গেলো।
বাকি সব তোমরা জানো। আমার জন্ম আজকের পাপের সৃষ্টি। কিন্তু আমার ইতিহাস ঘিরে সবার চোখ-কান খুলে যাবে। দেশের সম্পদ লুণ্ঠন, ভূমি দখল, ব্যাংকের টাকা লুটপাটকারী, ভোট বিহীন ক্ষমতায় আরোহণকারীদের মসনদে ধস নেমেছে। আমি মরেছি, কিন্তু তোমাদের মাফ নেই। আমি শয়তানদের বিরুদ্ধে মৃত্যুবরণ করেছি। আমি প্রমাণ করেছি যে, আমি আবু সাঈদ এবং মুগ্ধদের দলেরই একজন।
আমি আবার ফিরে আসব, তবে শয়তানদের মাঝে নয়, একটি সুন্দর পৃথিবীতে। বিদায়ের বেলায় শুধু বলি, নিঃশ্বাসে প্রাণ যে দান করবে ক্ষয় নাই, ভয় নাই।
মনে রেখো, জর্জ ওয়াশিংটন, চৌ এন লাই, মাহাথির মোহাম্মদ-এর মতো সৎ নেতারা পুরো একটি দেশ ও জাতিকে বদলে দিতে পারে, যেমন তোমাদের জন্য ডঃ ইউনুসকে রেখে গিয়েছি। সততার জয় হোক। জয় হোক আবু সাঈদ, মুগ্ধ, ও লক্ষ্য ছাত্র জনতার সংগ্রামের।
চলবে…
