হ-বাংলা নিউজ: ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তাঁর মিত্ররা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে আসলে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ছড়াচ্ছেন। নির্বাচনবিশেষজ্ঞ ও কয়েকজন রিপাবলিকান নেতা সতর্ক করে জানিয়েছেন, ট্রাম্প হেরে গেলে নির্বাচন প্রতারণার অভিযোগ করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।
এই কৌশলের পরিণতি মারাত্মক হতে পারে। অ্যারিজোনার মেসা নগরের রিপাবলিকান মেয়র জন গিলেস বলেছেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং তাঁর মিত্ররা ‘সবকিছু করতে প্রস্তুত’। তিনি আরো বলেন, ‘যদি তাঁরা হেরে যান, তবে তাঁরা বলবেন সবকিছু ভুল ছিল। যদি ট্রাম্প হেরে গিয়ে বিদ্রোহ বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা না করেন, তবে আমি অত্যন্ত বিস্মিত হব।’
মেয়র গিলেস নিজে রিপাবলিকান হলেও, গত মাসে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে কমলা হ্যারিসের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন।
ট্রাম্প ও তাঁর ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ (মাগা) মিত্ররা ২০২০ সালের নির্বাচনে ভোটিং মেশিন এবং ড্রপ বক্স নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন। ২০২০ সালে, নিজের প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে ট্রাম্প ভোটের ফলাফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এই অভিযোগে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য ও ফেডারেল কৌঁসুলিরা তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেন, পরে ট্রাম্প তাঁদেরও আক্রমণ করেন।
বর্তমানে, ট্রাম্পের মিত্ররা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক না এমন ভোটারদের ভোট দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন, যদিও তাদের পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘টার্নিং পয়েন্ট ইউএসএ’ ট্রাম্পের পক্ষে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে লাখ লাখ ডলার খরচ করছে। তারা ২০২০ সালের ভোটে কারচুপির ‘ভুয়া’ দাবি পুনরায় তুলছে এবং নতুন করে এ বছরও ভোটে কারচুপি হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে।
২০২০ সালের নির্বাচনের পর ট্রাম্প ও তাঁর মাগা মিত্ররা নির্বাচনে হস্তক্ষেপ এবং ট্রাম্পকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য ‘আইনের অপব্যবহার’ করার অভিযোগ তুলেছে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণ আটকাতে ট্রাম্প সে সময় আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যার ফলস্বরূপ ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটলে দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছিল।
গত জুনে বাইডেনের সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনী বিতর্কের সময়, ট্রাম্পকে প্রশ্ন করা হয়েছিল তিনি এ বছরের নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রতিশ্রুতি দেবেন কি না। ট্রাম্প তিনবার এ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে বলেন, ‘যদি নির্বাচন স্বচ্ছ, বৈধ এবং ভালো হয়, অবশ্যই।’
এরপর ট্রাম্প পুরোনো দাবি তুলেন এবং বলেন, ‘আমি এটা মেনে নিতে চাই, কিন্তু কারচুপি ও অন্যান্য বিষয়গুলো জঘন্য ছিল।’
এ বছর ট্রাম্পের মাগা সমর্থকেরা অনাগরিক ভোটারদের সংখ্যা নিয়ে অনেক মিথ্যা অভিযোগ করছেন, যা ট্রাম্পের কাছ থেকে উসকানি পাচ্ছে।
এপ্রিলে ট্রাম্প ও হাউস স্পিকার মাইক জনসন মার-আ-লাগোতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন এবং অনাগরিক ভোটারদের সংখ্যা নিয়ে কথা বলেন। পরবর্তীতে, প্রতিনিধি পরিষদে অনাগরিক ভোটারদের ভোট বেআইনি ঘোষণার একটি বিল উত্থাপন করা হয়, যদিও এটি ইতিমধ্যে আইনগত ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে।
নির্বাচনবিশেষজ্ঞ ও কয়েকজন রিপাবলিকান নেতা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ট্রাম্প ও তাঁর মাগা মিত্ররা এসব কৌশল ব্যবহার করে নির্বাচনের জন্য ময়দান প্রস্তুত করছেন। যদি ট্রাম্প হেরে যান, তবে তাঁরা যেন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তোলার সুযোগ পান।
রিপাবলিক–দলীয় সাবেক কংগ্রেস সদস্য ডেভ ট্রট বলেন, ‘ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের উৎসাহিত করছেন, যেন তারা আমাদের নির্বাচনপ্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে থাকে। তাঁর কাছে কোনো প্রমাণ নেই বা প্রতারণার দাবির কোনো ভিত্তি নেই। তিনি শুধু মিথ্যাগুলোকে স্থায়ী করতে চাইছেন এবং হেরে গেলে গণতন্ত্র বিঘ্নিত করার একটি পরিকল্পনা রয়েছে।’
সেন্টার ফর ইলেকশন ইনোভেশন অ্যান্ড রিসার্চের ডেভিড বেকার বলেন, ‘নির্বাচনে স্বচ্ছতা উন্নত করার প্রচেষ্টার ছদ্মবেশে তারা অনেক মিথ্যা দাবি করছে। তাদের উদ্দেশ্য হল, ট্রাম্প হেরে গেলে নির্বাচনী ব্যবস্থার প্রতি অবিশ্বাসের বীজ বপন করা এবং নির্বাচন নিয়ে বিরোধ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা।
