ছয়জনকে হত্যার আগে বান্ধবীকে বলেছিলেন, ‘মারা যাব বলে ভাবছি

যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি অঙ্গরাজ্যের ন্যাশভিল শহর। সোমবার সকাল ৯টা বেজে ৫৭ মিনিট। আভেরিয়ানা প্যাটন নামের এক তরুণীর মুঠোফোনের স্ক্রিনে ভেসে ওঠে কিছু বার্তা। এর একটিতে লেখা ছিল, ‘আমি আজ মারা যাব বলে ভাবছি।’ ইনস্টাগ্রামে ওই বার্তাগুলো পাঠিয়েছিলেন তাঁরই বন্ধু অড্রে হালে।সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইনস্টাগ্রামে দুই বন্ধুর মধ্যে কিছুক্ষণ কথা-চালাচালি হয়। এর পরপরই নাশভিলের কোভনেন্ট স্কুলে ঢুকে গুলি চালান অড্রে হালে। নির্বিচারে গুলিতে প্রাণ হারায় ৯ বছর বয়সী তিন শিক্ষার্থী। নিহত হন স্কুলের আরও তিন কর্মকর্তা-কর্মচারী। পরে সকাল ১০টা ২৭ মিনিটে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় হালের।অড্রে হালের বয়স ছিল ২৮ বছর। নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার বলে পরিচয় দিতেন তিনি। ইনস্টাগ্রামে কথা বলা আভেরিয়ানা প্যাটনের সঙ্গে স্কুলজীবনে বাস্কেটবল খেলতেন। মৃত্যুর আগে হালে তাঁকে কী লিখেছিলেন, তা সংবাদমাধ্যমের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন প্যাটন।  প্যাটনের ভাষ্যমতে হালে তাঁকে লেখেন, ‘আমি এখানে যে পোস্টটি করছি, সেটি আসলে একটি আত্মহত্যার চিঠি। আমি আজ মারা যাব বলে ভাবছি। মজা করছি না কিন্তু। আমি মারা যাওয়ার পর খবরে আমার কথা শুনতেও পারো।’ তিনি আরও লেখেন, ‘শেষবারের মতো বিদায় জানাচ্ছি। আমি তোমাকে ভালোবাসি। অন্য কোনো জীবনে দেখা হবে।’হালের বার্তার জবাবে প্যাটন লেখেন, ‘অড্রে! বেঁচে থাকার জন্য তোমার জীবনের অনেকটা সময় পড়ে আছে। আমি প্রার্থনা করি, সৃষ্টিকর্তা যেন তোমাকে বাঁচিয়ে রাখেন এবং রক্ষা করেন।’এরপর হালে লেখেন, ‘আমি জানি, তবে বাঁচতে চাই না। আমি দুঃখিত। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না বা তোমার নজর কাড়তে চাই না। আমি শুধু মরতে চাই। এটা তোমাকে সবার আগে জানাতে চেয়েছি। কারণ, আমার জীবনে যত মানুষ দেখেছি, তাদের মধ্যে তুমি সবচেয়ে ভালো।’প্যাটনকে পাঠানো হালের শেষ বার্তাটি ছিল, ‘আমি কী করতে যাচ্ছি, তা আমার পরিবার জানে না। যা করছি, তার অর্থ একদিন আরও পরিষ্কার হবে। যথেষ্ট প্রমাণ রেখে গিয়েছি। তবে খারাপ কিছু ঘটতে যাচ্ছে।’ এরপরই স্কুলে হামলা চালান হালে।ন্যাশভিলের টেলিভিশন চ্যানেল নিউজ চ্যানেল ৫-এর সঙ্গে আলাপচারিতায় প্যাটন বলেন, তিনি হালেকে শান্ত করার এবং সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। এ ছাড়া বাবার পরামর্শ নিয়ে সকাল ১০টা ৮ মিনিটে সুইসাইড প্রিভেনশন হেল্পলাইনে ফোন করেছিলেন। পরে ১০টা ১৩ মিনিটে ন্যাশভিল পুলিশে ফোন করেন তিনি। সেখান থেকে সরকারের আরেকটি হেল্পলাইনে ফোন করতে বলা হয়।এক মিনিট বাদে ১০টা ১৪ মিনিটে ওই হেল্পলাইনে ফোন করেন প্যাটন। প্রায় সাত মিনিট লাইনে থাকার পর অপর পাশ থেকে একজন জানান, প্যাটনের বাড়িতে একজন কর্মকর্তাকে পাঠাচ্ছেন তাঁরা। তবে সেদিন বেলা সাড়ে তিনটা পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তা তাঁর বাড়িতে যাননি বলে জানান প্যাটন।প্যাটন বলেন, ‘বন্ধুদের কাছ থেকে ফোন পেলাম। টেলিভিশনেও দেখলাম স্কুলে হামলাকারী হিসেবে অড্রের নাম বলা হচ্ছে। এরপরই জানলাম যে গুলি চালানোর ঠিক আগেই সে আমার সঙ্গে কথা বলেছিল।’ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *