জাপান থেকে আসা দুই শিশুর হেফাজত ও অভিভাবকত্ব পাওয়ার মামলায় শিশু দুটির কথা শুনেছেন আদালত। একই সঙ্গে ২২ জানুয়ারি মামলার যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ঠিক করা হয়েছে। ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান আজ রোববার এ আদেশ দেন।
ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে রোববার বেলা দুইটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত দুই শিশুর বক্তব্য শোনেন বিচারক। আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন দুই শিশুর জাপানি মা এরিকো নাকানো এবং বাবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমরান শরীফ। বড় মেয়ে সার্বক্ষণিক মা এরিকোর সঙ্গে ছিল। অপরদিকে ইমরানের সঙ্গে ছিল মেজ মেয়ে। এরিকোর আইনজীবী শিশির মনির প্রথম আলোকে বলেন, বড় মেয়ে আদালতকে বলেছে, সে তার মায়ের সঙ্গে জাপানে চলে যেতে চায়। অপরদিকে মামলার বাদী ইমরান শরীফ প্রথম আলোকে বলেন, মেজ মেয়ে আদালতকে বলেছে, সে বাবার সঙ্গে থাকতে চায়।
জাপান থেকে আসা দুই শিশুর হেফাজত ও অভিভাবকত্ব চেয়ে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার পারিবারিক আদালতে মামলা করেন ইমরান শরীফ। এই মামলায় বাদীপক্ষের তিনজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর বিবাদীপক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন জাপানি মা এরিকো।
জাপানের নাগরিক এরিকো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইমরানের ২০০৮ সালের ১১ জুলাই বিয়ে হয়। তাঁদের তিন মেয়েসন্তান রয়েছে। ২০২১ সালের ১৮ জানুয়ারি এরিকোর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন ইমরান। এরপর ২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে (বড় ও মেজ) নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন তিনি। ছোট মেয়ে জাপানে রয়েছে।তবে ইমরানের কাছ থেকে দুই মেয়েশিশুকে ফিরে পেতে ঢাকায় এসে ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট রিট করেন এরিকো। অন্যদিকে ছোট মেয়েকে ফিরে পেতে আরেকটি রিট করেন ইমরান। পৃথক রিটের ওপর শুনানি নিয়ে দুই শিশু তাদের বাবা ইমরানের হেফাজতে থাকবে বলে সে বছর ২১ নভেম্বর হাইকোর্ট আদেশ দেন। এ আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেন এরিকো, যা চেম্বার আদালত হয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ওঠে।
এরিকোর করা আবেদন (লিভ টু আপিল) নিষ্পত্তি করে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে আদেশ দেন আপিল বিভাগ। ঢাকার পারিবারিক আদালতে থাকা মামলাটির (২০২১ সালে শিশুদের বাবার করা) নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জাপান থেকে আসা দুই শিশু তাদের মা এরিকোর হেফাজতে থাকবে। শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ তাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাবেন বলে আদেশে বলা হয়।
আদেশে আরও বলা হয়, মামলার পারিপার্শ্বিকতা ও শিশুদের স্বার্থ বিবেচনায় শিশুদের এই আদালতের এখতিয়ারের বাইরে (দেশের বাইরে) নেওয়া যাবে না। আপিল বিভাগের আদেশের অনুলিপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট পারিবারিক আদালতকে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
