জর্ডানে জ্বালানি নিয়ে বিক্ষোভের মূল কারণ কী?

জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে জর্ডানে সম্প্রতি প্রতিবাদ সংঘটিত হয়েছে। মানুষের দুর্দশা লাঘবের পরিবর্তে কর্তৃপক্ষ কঠোর হাতে সেটা দমন করেছে। গত ৪ ডিসেম্বর দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে প্রথম বিক্ষোভ শুরু হয়।

জর্ডানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিক্ষোভ দমাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। আন্দোলনের সংগঠক এবং যাঁরা এতে সংহতি জানান, তাঁদের গ্রেপ্তার করে। প্রতিবাদকারীদের আইন অমান্যকারী ও ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তকমা দেওয়া হয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র দেখা যায়।

সড়কের পাশে ট্রাক থামিয়ে অনেক চালক শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। আবার দক্ষিণাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অনেক শহরে বিক্ষুব্ধ প্রতিবাদকারীরা গাড়ির টায়ার জ্বালিয়ে এবং পুলিশের গাড়িতে পাথর ছোড়েন।এটা অস্বীকারের কোনো উপায় নেই যে জর্ডানের সর্বশেষ জন-অসন্তোষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এটাও সত্য যে প্রান্তিক এলাকায় মানুষের অশিক্ষা ও দারিদ্র্যকে মতাদর্শ বিস্তারের ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করে চরমপন্থীরা।

কিন্তু জর্ডানের দক্ষিণাঞ্চলসহ অন্যান্য এলাকায় যে বিক্ষোভ হয়েছে, তার পেছনে জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বর্তমান ও পূর্ববর্তী সরকারের ব্যর্থতা দায়ী। এ ছাড়া জনগণের জীবনযাত্রার মান কমে যাওয়া ও সরকারের অস্বচ্ছতা এ বিক্ষোভে জ্বালানি জুগিয়েছে।

বর্তমানে জর্ডানে বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ। তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার ৫০ শতাংশ। দারিদ্র্য বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে দুর্নীতি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের শহরগুলোতে এ সংকট তীব্র। সরকারের অবহেলার বিরুদ্ধে সেখানে অভিযোগও বাড়ছে। পুলিশ হতাহতের ঘটনার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। কর্তৃপক্ষ এখনো আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করছে। এর মধ্যে মান পৌরসভার সাবেক মেয়র মাজিদ আল-শারারিও রয়েছেন।

১৮ ডিসেম্বর শারারিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর কয়েক দিন আগে তাঁর সঙ্গে আমার আলাপ হয়। তিনি বলেন, ভর্তুকি মূল্যে জ্বালানি দেওয়ার যে দাবি, সেটা উপেক্ষা করার মধ্য দিয়ে তাঁদের আন্দোলনে নামতে বাধ্য করা হয়েছে। আলোচনার সব দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী কোথাও উপস্থিত নেই।

২০১৮ সালে সরকারের রাজস্ব নীতি ও কর বৃদ্ধির প্রতিবাদে জর্ডানে বড় আকারে বিক্ষোভ হয়েছিল। এতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। অনেক সময় দেখা যায়, জনবিক্ষোভে সরকার পতনের পর অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। জন-অসন্তোষ প্রশমিত করার জন্যই তা করা হয়।

এ ধরনের কৌশল সাময়িক সময়ের জন্য সফল হয়। কিন্তু কোনো সমস্যার মূল কারণ খুঁজে বের করে তার সমাধান দেওয়া বেশি কার্যকর। জর্ডান সরকার এখন দ্বিতীয় পথটিই নিয়েছে। কেননা, জ্বালানিতে ভর্তুকি দেওয়ার মতো অর্থ তাদের হাতে নেই। রেকর্ড পরিমাণ বাজেটঘাটতির মুখে পড়েছে সরকার। বৈদেশিক সাহায্যও কমে এসেছে। জ্বালানিতে এর মধ্যে ৭০৫ মিলিয়ন ডলার ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। এ খাতে আর এক ডলারও খরচের সামর্থ্য নেই। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছিল, জ্বালানির দাম বিশ্ববাজারের সঙ্গে মিলিয়ে প্রতি মাসে সমন্বয় করা হবে। অনেকের প্রত্যাশা ছিল, জ্বালানির দাম কমবে। সম্ভবত এ ঘটনাই সাম্প্রতিক বিক্ষোভের অন্যতম কারণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *