হ-বাংলা নিউজ: জাতীয় নাগরিক পার্টির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের জন্য সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বিরুদ্ধে যে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, তা অস্বীকার করেছেন। একইসঙ্গে ১১ মার্চ সেনাপ্রধানের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ নিয়ে হাসনাত আবদুল্লাহর ফেসবুক পোস্টের বিরোধিতা করেছেন তিনি।
সেনাবাহিনীকে নিয়ে হাসনাতের সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্টে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সারজিস আলম নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে আজ একটি পোস্ট করেছেন, যেখানে তিনি হাসনাতের পোস্টে কিছু সংশোধন, সংযোজন এবং বিয়োজন করেছেন।
সারজিস আলমের পোস্ট:
১১ মার্চ সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ নিয়ে আমার কিছু সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন:
সেদিন আমি এবং হাসনাত সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। আমাদের দলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও আমাদের সঙ্গে যাওয়ার কথা ছিল, তবে শেষ মুহূর্তে ব্যক্তিগত কারণে তিনি যেতে পারেননি। প্রথমেই আমি স্পষ্ট করে জানিয়ে রাখি, সেদিন সেনানিবাসে আমাদের ডাকা হয়নি। বরং সেনাপ্রধানের মিলিটারি এডভাইজারের সঙ্গে প্রয়োজনমতো ম্যাসেজের মাধ্যমে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর বিনিময় করা হয়েছিল।
যেদিন সেনাপ্রধান পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিবস উপলক্ষে বেশ কড়া ভাষায় বক্তব্য দেন এবং ‘এনাফ ইজ এনাফ’ বলেন, তখন আমি সেনাপ্রধানের মিলিটারি এডভাইজারকে জিজ্ঞাসা করি, “আপনারা কি এ বিষয়ে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু দেখছেন?” কারণ, সেনাপ্রধানের বক্তব্য ছিল যথেষ্ট সোজা এবং কঠিন। তিনি আমাকে বলেন, “তুমি কি এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে চাও?” আমি বললাম, “হ্যাঁ, বলা যেতে পারে।” তারপর সেদিন আমাদের সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়।
মানুষ একেকভাবে অন্যের অভিমত গ্রহণ করে। হাসনাত সেদিন তার জায়গা থেকে যেভাবে সেনাপ্রধানের বক্তব্য গ্রহণ করেছেন এবং ফেসবুকে লিখেছেন, সেখানে আমি কিছুটা দ্বিমত পোষণ করি। আমার মতে, ওই বক্তব্যটি আমি ‘প্রস্তাব’ হিসেবে নয়, বরং ‘অভিমত প্রকাশ’ হিসেবে দেখেছি। ‘অভিমত প্রকাশ’ এবং ‘প্রস্তাব দেওয়া’—এই দুইয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
হাসনাতের পোস্টে যে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নিয়ে কথা বলা হয়েছে, সেখানে ‘চাপ দেওয়া হয়েছে’ এমনটি আমার মনে হয়নি। বরং সেনাপ্রধান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেছিলেন যে, দীর্ঘমেয়াদে দেশের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, তা বিবেচনায় রেখেই তিনি তার কথা বলেছিলেন।
হাসনাতের বক্তব্যে যে বিষয়গুলো উল্লেখ হয়েছে—যেমন ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’, ‘সাবের হোসেন’, ‘শিরিন শারমিন চৌধুরী’, ‘সোহেল তাজ’—এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিলে দেশের উপর কী প্রভাব পড়তে পারে, স্থিতিশীলতা বা অস্থিতিশীলতা কোন পর্যায়ে যেতে পারে, এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে, হাসনাতের ফেসবুক পোস্টে যে সুরে তা উপস্থাপিত হয়েছে, আমি মনে করি কথোপকথন ততটা চরম ছিল না। তবে তা আগের তুলনায় স্ট্রেইট-ফরওয়ার্ড এবং আত্মবিশ্বাসী ছিল।
হাসনাত তার পোস্টে একটি বিশেষ বক্তব্য উল্লেখ করেছেন—‘আলোচনার এক পর্যায়ে বলি, যেই দল এখনো ক্ষমা চায়নি, অপরাধ স্বীকার করে নি, সেই দলকে আপনারা কিভাবে ক্ষমা করে দিবেন।’ এ বক্তব্যটি সত্যি, তবে এটি এমন সময় বলা হয় যখন সেনাপ্রধান বিদায় নিচ্ছিলেন এবং তিনি কিছুকাল দাঁড়িয়ে থেকে জুনিয়রদের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলছিলেন। তাঁর কথার সুরে কোনো রেগে যাওয়ার ইঙ্গিত ছিল না, বরং তিনি অভিজ্ঞতার ভার তুলে জুনিয়রদের সচেতন করেছিলেন।
‘হাসনাত না ওয়াকার’ এই ধরনের ন্যারেটিভ বা স্লোগান আমি প্রত্যাশা করি না। হাসনাতের জায়গা ভিন্ন এবং সেনাপ্রধানের জায়গা ভিন্ন। সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক দলের বিপরীতে দাঁড় করানোর কোনো প্রয়োজন নেই। তদুপরি, সেনাপ্রধানের পদত্যাগের বিষয়টি আমাদের বক্তব্য নয়।
এছাড়া, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। আমাদের দলের অভ্যন্তরে আমরা এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে পারতাম, তবে ফেসবুকে এই সব তথ্য প্রকাশ পেলে ভবিষ্যতে এর ফলে কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আস্থাহীনতায় পড়তে পারে।
সারজিস বলেন, “আমার এই বক্তব্যে আমি হাসনাতের বক্তব্যের সঙ্গে কিছু বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করেছি। এটি অনেকেই সমালোচনা করতে পারেন, তবে আমি বিশ্বাস করি, আমাদের ব্যক্তিত্ব কখনো স্রোতে গা ভাসানোর ছিল না। আমরা যেভাবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম, আজও সেই একই কমিটমেন্ট নিয়ে চলতে পারি।”
“আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।”
