হ-বাংলা নিউজ: মাগুরা: রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে অস্ত্র এবং মাদক ব্যবসা জমজমাট হয়ে উঠেছে, যার সঙ্গে মানব পাচারের ঘটনাও ঘটছে। গত সাত মাসে, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্যরা ১৬টি অস্ত্র মামলায় ২৩ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছেন। এদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের মধ্যে ২৪টি ওয়ান শুটারগান ছিল। একই সময়ে, ৩১টি মাদক মামলায় ৩৫ জন গ্রেফতার হয়েছে এবং বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য, যেমন আইস-ক্রিস্টাল মেথ ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। ইয়াবার পরিমাণই ৭০ হাজার পিসের বেশি।
রোহিঙ্গা অপরাধীরা বাংলাদেশি দুষ্টচক্র ও চোরাচালানিদের সাথে সংযোগ রেখে এসব অপরাধকাণ্ডে জড়াচ্ছে।
যুগান্তরের অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এসব ক্যাম্পে আগ্নেয়াস্ত্র মিয়ানমার থেকে আসছে। একই সঙ্গে, কক্সবাজারের মহেশখালীসহ বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র তৈরি হচ্ছে। এই অস্ত্রগুলি স্থানীয় ক্যাম্পগুলোতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করার মূল চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করছে।
রোহিঙ্গা গ্রুপগুলো মধ্যে রয়েছে: আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি), আরএসও (রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন), আরাকান রোহিঙ্গা আর্মি (এআরএ), নবী হোসেন গ্রুপ, মাস্টার মুন্না গ্রুপ, দীল মোহাম্মদ ওরফে মার্স গ্রুপ, ডাকাত সালমান গ্রুপ এবং ডাকাত সাদ্দাম গ্রুপ। এসব গ্রুপের তৎপরতায় ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত ২০২টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, যার মধ্যে ৬৭ শতাংশ হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র আরসা, আরএসও এবং এআরএ গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের কারণে ঘটেছে।
কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলার ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই ধরনের সংঘর্ষে ইতিমধ্যে অন্তত ২০২ জন খুন হয়েছেন। এসব হত্যাকাণ্ডের মধ্যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও মাদক-অস্ত্র ব্যবসার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। গত সাত মাসে অন্তত আটটি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ, ৮ মার্চ উখিয়ার বালুখালী ৮-ইস্ট নম্বর ক্যাম্পে সংঘর্ষে এক রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ রফিক (৩৩) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত সচিব) মিজানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, “রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা অনেক বেশি। তারা দীর্ঘসময় ধরে হত্যা-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ক্যাম্পে এমন যুবকরা রয়েছেন, যারা মা-বোনকে ধর্ষিত হতে কিংবা বাবাকে হত্যা হতে দেখেছে, তাদের জন্য ক্যাম্পে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত কঠিন।”
তিনি আরও জানান, “রোহিঙ্গাদের একটি অংশ বাংলাদেশি জনগণের সাথে মিশে গেছে। ইয়াবা চোরাচালান ও অবৈধ অস্ত্রই তাদের অন্তর্দ্বন্দ্বের মূল কারণ। মিয়ানমারের সীমান্তে যুদ্ধ চলমান থাকার কারণে অস্ত্র সহজেই আসছে।”
গত বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত, এপিবিএন ১০৯টি অস্ত্র মামলায় ১৩৮ রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করেছে। ১৫৪টি মাদক মামলায় ১৮৫ রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ৪৪টি হত্যা মামলায় ২৯ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অন্যান্য ঘটনায় আরও ৩৮৮ রোহিঙ্গা গ্রেফতার হয়েছে।
এপিবিএন ডিআইজি (এফডিএমএন) প্রলয় চিসিম যুগান্তরকে বলেন, “অস্ত্র ও মাদক ব্যবসা এবং ব্যবসার টাকা ভাগবাঁটোয়ারাকে কেন্দ্র করেই রোহিঙ্গাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। এর সঙ্গে ভূরাজনৈতিক কারণও রয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অবস্থান মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি হওয়ায় অস্ত্র এবং মাদক সহজেই আসছে। স্থানীয় কিছু অপরাধীর সহযোগিতায় সীমান্তে পাহারা দুর্বল হয়ে পড়েছে, যার ফলে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে।”
এপিবিএন জানিয়েছে, গত সাত মাসে ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
