আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড়

হ-বাংলা নিউজ: ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা, ধর্ষণ এবং মব জাস্টিসসহ বিভিন্ন অপরাধের মাত্রা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। যদিও এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের অনেককেই আটক করতে সক্ষম হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তবুও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এর ফলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পদত্যাগের দাবিও উত্থাপিত হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে।

অভিযোগ রয়েছে, এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত বেশিরভাগই পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ এবং তার অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মী। তবে, কিছু জায়গায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে। বিএনপি দলের পক্ষ থেকে কিছু নেতাকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। অন্যদিকে, জামায়াতে ইসলামী এবং কিছু ইসলামপন্থী দলও ফ্যাসিস্টদের দোসরদের শেল্টার দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

এমন পরিস্থিতির মধ্যে, কিছুদিন ধরে দেশে ধর্ষণসহ অন্যান্য অপরাধের সংখ্যা ফের বেড়ে গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে সরানোর দাবিটি আবারও জোরালো হয়েছে। অনেক রাজনীতিক মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য একটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন এবং তাকে পদত্যাগ করা উচিত।

তবে, অন্তর্বর্তী সরকার ও কিছু রাজনৈতিক দল এই দাবি মানতে নারাজ। তারা মনে করছেন, পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পিছনে একটি বড় ষড়যন্ত্র থাকতে পারে এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সরিয়ে পরিস্থিতির সমাধান হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এদিকে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের অংশগ্রহণকারীরা, ছাত্র-শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার সংগঠনের পক্ষ থেকেও আগেই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পদত্যাগের দাবি ওঠেছিল। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে সেনা-পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর যৌথ অভিযানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি, বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যে দুর্বলতা দেখিয়েছে, তা সামাজিক নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। মব বা দলবদ্ধ বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সরকারের সাত মাসে কার্যকর পদক্ষেপের অভাব ছিল। এর ফলে সাধারণ মানুষ সরকারের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে।

বিএনপির নেতারা মনে করছেন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরিবর্তন আনা হলে তা বিবেচনা করা যেতে পারে। তবে, জামায়াতে ইসলামীসহ ইসলামপন্থী দলগুলি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে সরানোর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা মনে করছেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পিছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা পদত্যাগ করলেও সমস্যা সমাধান হবে না।

এদিকে, সরকারের পক্ষ থেকে বার বার কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও, সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্দেহ এবং অনাস্থা বাড়ছে। মাগুরায় একটি শিশু নিপীড়নের ঘটনায় দেশে ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে, আর বিভিন্ন অপরাধের বিষয়ে গ্রেফতার অভিযানও চলছে। তবে, পুলিশের সাবেক আইজি নুরুল হুদা মনে করেন, সরকারের পদক্ষেপে অনেক দেরি হয়ে গেছে এবং এখন তা কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী নিজেও পদত্যাগের বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন। গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে পদত্যাগের প্রশ্নের জবাবে বলেন, “আমি কাজ করছি, কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। পদত্যাগের কথা কেন আসবে?”

সরকারের পক্ষ থেকে যদিও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, তবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের মধ্যে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা সমাধানে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে বিভক্তি রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *