ইন্টারনেট বন্ধের ক্ষমতা ভবিষ্যতে কোনো সরকারের বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে থাকবে না: ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব

হ-বাংলা নিউজ: সরকার এমন নীতি গ্রহণ করবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো সরকার বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট বন্ধ করতে না পারে—এমনটি জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। রোববার (৯ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘দ্রুতগতির মানসম্পন্ন ও সহজলভ্য ইন্টারনেট প্রাপ্তিতে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই তথ্য দেন।

ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘সাইবার সেফটি অর্ডিন্যান্সে আমরা ইন্টারনেটকে নাগরিকের অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছি। একইসঙ্গে টেলিযোগাযোগ আইনেও এমন কিছু রাখা হবে না, যা সরকার বা বেসরকারি কোম্পানিকে ইন্টারনেট বন্ধের অধিকার দেবে। ইন্টারনেট তরুণ প্রজন্মের একটি মূল্যবান সম্পদ, এটি নিয়ন্ত্রণ বা বন্ধ করা আমাদের দেশের অগ্রগতির পথে বাধা হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় কয়েক দফা ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়েছিল, যা দেশের ফ্রিল্যান্সার, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ব্যাংকিং সেক্টরকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এ কারণে আমাদের আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং কমেছে এবং বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় আমরা এমন নীতি প্রণয়ন করতে যাচ্ছি, যাতে ভবিষ্যতে কেউ ইন্টারনেট বন্ধ করতে না পারে।’

তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আরো জানান, বাংলাদেশে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা চালু করতে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘দেশের গ্রাহকদের জন্য আমরা স্টারলিংক সেবা নিয়ে আসবো এবং এর বাস্তবায়নে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এদিকে, স্টারলিংক চালু হলে দেশীয় ইন্টারনেট ব্যবসায়ীরা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন, এমন উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘মোবাইল ও আইএসপি অপারেটরদের ইন্টারনেট মূল্য কমানো উচিত এবং ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের সর্বনিম্ন গতি ২০ এমবিপিএস হওয়া প্রয়োজন। ৫ বা ১০ এমবিপিএস গতির সংযোগ ব্রডব্যান্ড হিসেবে গণ্য করা যায় না।’

তিনি আরও বলেন, ‘১০০ এমবিপিএস সংযোগ ভাগ করে ৫ জন ব্যবহার করলে এটি একটি ভালো সেবা নয়। স্টারলিংক আসলে দেশের প্রিমিয়াম গ্রাহকরা সেই দিকে ঝুঁকতে পারে। তাই ব্যবসায়ীদের এখন থেকেই উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে হবে।’

দেশের টেলিকম খাতের নীতিমালা নিয়ে সমালোচনা করে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘বিগত সরকারের যে নীতি গ্রহণ করা হয়েছিল, তা আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আমাদের নীতিমালা এখনও ফোন কলের ওপর নির্ভরশীল। তবে আমরা আধুনিক নীতি বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি।’

আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির বিশেষ সহকারী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন বলেন, ‘তথ্য পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু সাবেক স্বৈরশাসকরা এই অধিকার থেকে মানুষকে বঞ্চিত করেছেন। ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন জায়গায় সংস্কারের কথা বলা হলেও টেলিকমিউনিকেশন খাত নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আয়োজিত সভায় আরো বক্তব্য রাখেন—বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইমাদুর রহমান, আইআইজির সভাপতি আমিনুল হাকিম, বিডি জবসের সিইও ফাহিম মাশরুর, আইএসপিএবির সভাপতি ইমদাদুল হক, এবি পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, বেসিসের অ্যাসোসিয়েট কমিটির সভাপতি রাফেল কবির, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালেদ আবু নাসির, এবং ইকোনোমিক রেগুলেশনের ডিরেক্টর শাহ মো. ফজলে খুদা। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম বিশেষজ্ঞ মোস্তফা হুসাইন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *