মব জাস্টিস: নতুন আতঙ্কের রূপ

হ-বাংলা নিউজ: মব জাস্টিস’ এখন একটি ভীতিকর পরিস্থিতির নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই শব্দটি ব্যবহৃত হয় সংঘবদ্ধ কিছু মানুষের আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বর্ণনা করতে, যা অপরাধ বিজ্ঞানে ‘মব জাস্টিস’ হিসেবে পরিচিত। সাম্প্রতিক সময়ে, এই প্রবণতার কারণে জনগণ গণপিটুনির শিকার হচ্ছে, বাড়িঘর লুটপাট করা হচ্ছে, এবং কখনও কখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। এমনকি কেউ-কেউ পদত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন বা অপমানিত হচ্ছেন। সম্প্রতি দেশে এমন ঘটনায় উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে।

এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার পিছনে, বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সরকারের অবস্থান এবং কিছু ভুল পদক্ষেপের ভূমিকা রয়েছে। তারা মনে করেন, বিভিন্ন জায়গায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংকটে পড়েছে, যা দেশের সুষ্ঠু পরিস্থিতি এবং সরকারের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকির সৃষ্টি করতে পারে। মব জাস্টিসের এই বাড়তি প্রবণতা, বিশেষত গত কয়েক মাসে, নজরদারি ছাড়াই বেড়ে গেছে।

তারা আরও বলেন, বিগত সময়ে আইন নিজের হাতে নেওয়ার প্রবণতা ছিল মূলত চোর বা ডাকাতদের বিরুদ্ধে, কিন্তু এখন এর পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়েছে। পুলিশ, শিক্ষক, চিকিৎসক, আইনজীবী এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও এই ধরনের আক্রমণের শিকার হচ্ছেন। মব জাস্টিসের হাত থেকে বাদ পড়ছেন না নিরপরাধ ব্যক্তিরাও।

নির্দিষ্টভাবে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এই প্রবণতা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষজ্ঞরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর কথা বলেছেন। তাদের মতে, মব জাস্টিসে বাধা দেওয়ার জন্য স্থানীয়ভাবে বাড়ানো যেতে পারে টহলদারি। গত কয়েক মাসে এই ধরনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে দেশের পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে উঠেছে, এবং কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে একদিকে যেমন অপরাধ বেড়েছে, অন্যদিকে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

তবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাংলাদেশে নতুন নয়। এমনকি একাধিক ঘটনার পর সরকারের সতর্ক বার্তা ও পুলিশ বাহিনীর তৎপরতার পরও এই প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ, গুলশান, ভাটারা এবং সাতকানিয়া এলাকায় মব জাস্টিসের ঘটনা ঘটেছে। গণপিটুনি, হামলা, ভাঙচুর, এবং জোর করে পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উদ্বেগ তৈরি করেছে।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে, সরকারের উচিত তৎক্ষণাত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, শুধু সতর্কতা নয়, প্রয়োজনে দ্রুত পুলিশি টহল বৃদ্ধি করা উচিত। মব জাস্টিসের ঘটনায় নিরপেক্ষভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি প্রদান করতে হবে।

বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মীরা, পুলিশ সদস্যরা এবং বিভিন্ন বিশেষজ্ঞরা একমত যে, ‘মব জাস্টিস’ নামক এই ভয়াবহ প্রবণতা দেশের সুশাসন ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *