মোট ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। পথে কত ঝড়-ঝঞ্ঝা, কত অভিজ্ঞতা। লুভা নাহিদ চৌধুরীর কাছে ওই যাত্রা মনে হয়েছে, মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মতো।
লুভা নাহিদ চৌধুরী বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক। ১৯৭৩ সালে পরিবারের সঙ্গে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন তিনি। রাজধানীর বেঙ্গল শিল্পালয়ে শনিবার সন্ধ্যায় আয়োজিত ‘বিদ্যাপীঠ বৈঠকী–অন্তরঙ্গ আলাপে গুণিজন’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে ওই ঘটনার স্মৃতিচারণা করেন তিনি।
জীবন ও শিল্পযাত্রায় প্রভাব ফেলেছেন এ রকম বেশ কয়েকজন ব্যক্তির গল্প লুভা নাহিদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বড় পর্দায় তুলে ধরেন। সেসব মানুষের স্মৃতি, ছবি ও লুভার মুখে তাঁদের গল্প মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনেছেন শ্রোতারা। গল্পের সূত্র ধরে আসে লুভার কৈশোর, তারুণ্যের সময়ের সামাজিক ইতিহাস ও ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সব অভিজ্ঞতা।
১৯৬২ সালে করাচির একটি সম্ভ্রান্ত পরিবারে লুভা নাহিদ চৌধুরীর জন্ম। বাবা আনিস চৌধুরী ছিলেন নাট্যকার ও সাংবাদিক। মা রাজিয়া চৌধুরী স্কুলশিক্ষক। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর পরিবার পশ্চিম পাকিস্তানে আটকা পড়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে সপরিবার বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১১ বছর।
করাচি থেকে ঢাকায় আসার অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে লুভা বলেন, ‘চৌদ্দ শ কিলোমিটার পথ। দালালরা বলে দিয়েছিল, কোনো কথা বলা যাবে না। সঙ্গে কোনো কাগজ রাখা যাবে না। দীর্ঘ সময়ের পর গাড়ির বাইরে তাকিয়ে মনে হলো বরফ পড়ছে। একজন ওভার কোট পরা সৈনিক। দেখে বুঝলাম রাশিয়ান সেনা। আমার সেদিনের অনুভূতি এখনকার সেই নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মতো। যদিও আমাদের অতটা কষ্ট করতে হয়নি, কিন্তু অনুভূতিটা ভয়াবহ।’
১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে স্থাপত্যে স্নাতক সম্পন্ন করেন লুভা নাহিদ চৌধুরী। পেশাজীবনের প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশ সরকারের গণপূর্ত বিভাগে ১০ বছর কাজ করেছেন। ১৯৭৫ সালে শাস্ত্রীয় সংগীতে হাতেখড়ি মিথুন দের কাছে। ১৯৮৮ সাল থেকে এখনো শিখে যাচ্ছেন বরকত হোসেনের কাছে। স্থপতি হিসেবে দেশে বেশ কিছু কাজ করেছেন তিনি। ২০১৫ সালে লুভা নাহিদ চৌধুরী অনন্যা শীর্ষ দশ স্বীকৃতি এবং শিল্পক্ষেত্রে অবদানের জন্য ব্র্যান্ড ফোরাম অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
