বেবিচকে বিমানবন্দর উন্নয়নের নামে দুর্নীতির মহোৎসব, তদন্ত করছে দুদক

হ-বাংলা নিউজ: বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)-এর আওতাধীন দেশের বিভিন্ন বিমানবন্দরের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতির তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ৮টি বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালসহ মোট ৩২ হাজার ৬০৫ কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এর মধ্যে ৯শ কোটি টাকার দুর্নীতির মামলা ইতোমধ্যে দায়ের করা হয়েছে এবং আরও কিছু মামলার প্রস্তুতি চলছে।

দুদকের তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, বিমানবন্দরগুলোর উন্নয়ন কার্যক্রমে দুর্নীতির চিত্র সঠিকভাবে খতিয়ে দেখছে। এমনকি সাবেক সরকারের সময়ে এসব দুর্নীতি ঘটলেও এর প্রভাব এখনও রয়েছে। একাধিক আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের মধ্যে একজন পলাতক, একজন বাধ্যতামূলক অবসরে, এবং অন্য একজন বর্তমানে কারাগারে আছেন। তবে, কিছু ব্যক্তি এখনও তাদের পদে বহাল রয়েছেন এবং অফিসে কাজ করছেন।

তদন্তে উঠে এসেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পের আওতায় কাজ না করেই ১৩৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। বিদেশি একটি কোম্পানির মাধ্যমে প্রকল্প যাচাই-বাছাইয়ের নামে এ টাকা লোপাট হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দর প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার আগেই ২১২ কোটি টাকার বিল দেওয়া হয়েছে।

থার্ড টার্মিনাল নির্মাণের নকশা পরিবর্তন করেও ১২শ কোটি টাকা সাশ্রয় হওয়ার পরও তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া অন্যান্য বিমানবন্দর প্রকল্পের মধ্যে দুর্নীতির পরিমাণ আরও বিপুল। চট্টগ্রাম শাহ আমানত, কক্সবাজার, সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন প্রকল্পে হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

এ বিষয়ে দুদক জানায়, তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর মামলা দায়ের করা হবে। ইতোমধ্যে এ দুর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক বিমান সচিব মহিবুল হক, যুগ্মসচিব জনেন্দ্রনাথ সরকার, সাবেক বেবিচক চেয়ারম্যান মফিদুর রহমান, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক ও বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

তদন্তে উঠে এসেছে, হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিভিন্ন বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি ও লুটপাট হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে এবং দেশের বাইরে যাওয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাকে নজরদারিতে রেখেছে।

এদিকে, বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভুঁইয়া জানিয়েছেন, তারা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তিনি আরও বলেন, ‘দুদক মামলার পরই তদন্ত শুরু হবে, এবং আদালত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, বেবিচকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিমানের উন্নয়ন কাজের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে, এবং এ বিষয়ে সমস্ত তথ্য-প্রমাণ দুদকের কাছে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *