বায়ুদূষণের কারণে দেশে প্রতি বছর ৫ হাজার ২৫৮ শিশুসহ ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জনের অকাল মৃত্যু: সিআরইএ গবেষণা

হ-বাংলা নিউজ:

সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ) পরিচালিত এক গবেষণায় জানানো হয়েছে, বায়ুদূষণের প্রভাবে প্রতি বছর ৫ হাজার ২৫৮ শিশুসহ ১ লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকাল মৃত্যু ঘটে।

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে, বায়ুদূষণের কারণে প্রতিবছর ৯ লাখ মায়ের অকাল প্রসব হয় এবং প্রায় ৭ লাখ কম ওজনের শিশু জন্মগ্রহণ করে। এ ছাড়াও, প্রতি বছর ৬ লাখ ৭০ হাজার রোগী জরুরি বিভাগের চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হন। এর ফলে, প্রতি বছর ২৬৩ মিলিয়ন কর্মদিবস ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সিআরইএ এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে।

গবেষণার রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দেশের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। দেশে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ক্ষুদ্র বালু কণার বার্ষিক মান ৭৯.৯ মাইক্রোগ্রাম, যা জাতীয় মানদণ্ড (৩৫ মাইক্রোগ্রাম) এর দ্বিগুণেরও বেশি। এই দূষণের কারণে উচ্চতর স্বাস্থ্যসেবা ব্যয় ও উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। ২০১৯ সালে এই ব্যয় ছিল প্রায় ১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশের মোট জিডিপির প্রায় ৫ শতাংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ৫ মাইক্রোগ্রামের মানের তুলনায় বাংলাদেশের দূষণের মাত্রা ১৫ গুণ বেশি।

গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, এই মারাত্মক বায়ুদূষণের কারণে জনস্বাস্থ্য গুরুতর প্রভাবিত হচ্ছে, বিশেষ করে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য এটি সবচেয়ে ক্ষতিকর। ২০২২ সালে সরকার প্রতি ঘনমিটার বাতাসে ধূলিকণার জাতীয় মান ১৫ মাইক্রোগ্রাম থেকে বাড়িয়ে ৩৫ মাইক্রোগ্রাম নির্ধারণ করেছিল, যা জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে গুরুতর উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে এবং বায়ু মানের উন্নতি ব্যাহত করেছে।

গবেষণায় আরো বলা হয়েছে যে, সঠিক বায়ু মান অনুসরণ করলে মৃত্যুর হার ১৯ শতাংশ কমে যেতে পারে এবং আয়ু সংক্রান্ত সমস্যা ২১ শতাংশ এবং অক্ষমতার সঙ্গে জীবনযাপন ১২ শতাংশ কমে যেতে পারে। পাশাপাশি, ডব্লিউএইচও’র ২০২১ সালের কঠোর নির্দেশিকা অনুযায়ী বায়ু মান ৫ মাইক্রোগ্রামে কমালে প্রতি বছর ৮১ হাজার ২৮২ মানুষের জীবন রক্ষা সম্ভব।

গবেষণার সুপারিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশকে জাতীয় বায়ু মানদণ্ড বাস্তবায়ন করতে হবে এবং মাঝারি মেয়াদে ১০ মাইক্রোগ্রামের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত। দীর্ঘমেয়াদে, ২০২১ সালের ডব্লিউএইচও নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি ঘনমিটারে ৫ মাইক্রোগ্রামের লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। এছাড়া, কয়লা ও ডিজেলের মতো জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎসাহিত করতে হবে।

সিআরইএ’র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিশ্লেষক ড্যানিয়েল নেসান বলেন, বায়ুদূষণের মাত্রা কমানোর জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানির গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বায়ু মান বিশ্লেষক ড. জেমি কেলি বলেন, বাংলাদেশের বায়ুদূষণের কারণে প্রতি বছর হাজার হাজার শিশু অপুষ্টি, কম ওজন এবং অকাল মৃত্যুর শিকার হচ্ছে। এই পরিস্থিতির উন্নতি করতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, যা জনস্বাস্থ্য এবং দেশের অর্থনীতিকে সুস্থ রাখবে।

ক্যাপস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের মাত্রা এতটাই বেড়ে গেছে যে, এটি শুধু শারীরিক স্বাস্থ্যকেই প্রভাবিত করছে না, মানসিক স্বাস্থ্যেও বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *