হ-বাংলা নিউজ:
বর্তমানে আমনের ভরা মৌসুম চলছে, তবে বাজারে চালের দাম বাড়ছে। ভারত থেকেও চাল আমদানি হচ্ছে, ফলে সরবরাহ বেড়েছে। কিন্তু মিলারদের কারসাজির কারণে দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে সরু চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে সর্বোচ্চ ৮৫-৮৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে, মোটা চালের দামও ৫-৭ টাকা বেড়ে কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ ৬০ টাকায় পৌঁছেছে। ফলে মৌসুমেও চাল কিনতে ভোক্তারা সমস্যায় পড়ছেন।
মাংসের দামও ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা। গরুর মাংসের দাম ৭৫০-৭৮০ টাকা প্রতি কেজি। মাছের দামও বেড়েছে, তবে সরবরাহ বাড়ায় কিছু কিছু সবজির দাম কমেছে। শুক্রবার রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার মিনিকেট চালের দাম ৮২-৮৫ টাকা প্রতি কেজি, যা দুই সপ্তাহ আগে ৭৫ টাকা ছিল। নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৬ টাকায়, যা আগে ৭০-৭৮ টাকায় বিক্রি হত। মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়, যা আগে ৫০-৫৫ টাকায় পাওয়া যেত। মাঝারি আকারের বিআর ২৮ জাতের চালের দামও বেড়েছে।
কাওরান বাজারের আল্লাহর দান রাইস এজেন্সির মালিক মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, “দেশে আমনের ভরা মৌসুম চলছে এবং কৃষকের নতুন চাল বাজারে এসেছে। ভারত থেকেও চাল আমদানি করা হচ্ছে, এতে সরবরাহ বেড়েছে। তবে মিল থেকে হঠাৎ সব ধরনের চালের দাম ৫০-১০ টাকা বাড়ানোর কারণে খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে। যদি মিল পর্যায়ে তদারকি করা হয়, তবে দাম কমতে পারে, এতে ভোক্তারা উপকৃত হবে।”
এদিকে মাংসের দামও বেড়েছে। শুক্রবার ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়। সাদা লেয়ার মুরগি ২৫০ টাকা, লাল লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির দাম ৬৫০-৭০০ টাকা, এবং গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের দামেও অস্বস্তি বিরাজ করছে। পাঙাস মাছ ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, দেশি কৈ ৮০০ টাকা, চাষের কৈ ৩৫০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-৪৫০ টাকা, মাগুর ৮০০ টাকা, বাইম ৮০০ টাকা, রুই মাছ ৩০০-৩৫০ টাকা, কাতল মাছ ৩৫০-৪৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তেলাপিয়া ২৩০, চিংড়ি ৮০০, মলা মাছ ৩৫০, শোল মাছ ৯০০-১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মো. হাকিম নামে এক ক্রেতা বলেন, “বাজারে এসে দেখি চালের দাম বেড়ে গেছে। বাজারে কোনো কিছুর দাম স্থির থাকে না। বিক্রেতারা সপ্তাহে সপ্তাহে দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটছে। মাছের দামও এমন যে, তা কেনা খুবই কঠিন। ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সবকিছুতেই দাম বেড়েছে।”
কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন বলেন, “বাজারে অনেক সংস্থা তদারকি করে, কিন্তু ভোক্তা কোনো সুফল পাচ্ছে না। পণ্যের দাম বাড়লেই কর্মকর্তারা অভিযান চালান, কিন্তু বাজারের পর্যায়ভিত্তিক তদারকি হয় না। ফলে অসাধুরা এই সুযোগে ভোক্তাকে হয়রানি করছে। তিনি আরও বলেন, “রোজা শুরু হতে আর কিছু মাস বাকি, যদি এখন থেকে বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে না সাজানো হয়, তবে ক্রেতাদের আরও সমস্যায় পড়তে হবে।”
তবে, শীতকালীন সবজির সরবরাহ বাড়ায় কিছুটা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা। শুক্রবার বিক্রেতারা জানান, লম্বা বেগুন ৫০ টাকা, গোল বেগুন ৫৫-৬০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, শালগম ৩০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩০ টাকা, করলা ৭০-৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পাকা টমেটো ৬০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, শিম ৪০-৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, নতুন আলু ৫০ টাকা, এবং মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
