হ-বাংলা নিউজ:
হ-বাংলা নিউজ: নাব্যতা না থাকলে নদী, বিল বা খালে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। ১৯৯১ সালের যুদ্ধের পর চট্টগ্রাম বন্দর একেবারেই অকেজো হয়ে পড়েছিল। সেটি পরিষ্কার করতে প্রায় ৪-৫ বছর সময় লেগেছিল। এখন নির্বাচন সামনে রেখে রাষ্ট্রীয় মেশিনারি কতটা পরিপাটি আছে, সেটিই ভাববার বিষয়।
গত ১৫-১৬ বছরে সরকারি সেবামূলক সংস্থাগুলোর ভেতরে যে পরিমাণ ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে, নির্বাচনের আগে সেসব ক্ষত সারানো জরুরি। এই উপমহাদেশে ব্রিটিশদের আগমনের পর এক বড় বিপ্লব ঘটে। তারই ধারাবাহিকতায় দেশে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধু শিক্ষা নয়, আইন-আদালত, রেলপথ, সড়ক, সরকারি অফিস এবং জনসেবার ক্ষেত্রে বিশাল অবদান রাখে তারা। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য ব্রিটিশরা গণতন্ত্র এবং পার্লামেন্টারি ব্যবস্থা চালু করে। তাদের শাসনামলে সুষ্ঠু নির্বাচন হতো এবং আইনের শাসন ও প্রশাসন ছিল নির্বাচন সুরক্ষার মূল ভিত্তি।
রাষ্ট্রের প্রশাসন, পুলিশ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আজ পুলিশের আইজি জেলে, অনেক বড় কর্মকর্তা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন অথবা আত্মগোপনে আছেন। পুলিশের বাহিনীতে লক্ষাধিক কর্মী রয়েছে। কিন্তু প্রথম সারির ৫ হাজার কর্মীর মধ্যে কত শতাংশ সৎ, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, ৫% পাওয়া যাবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে।
সুষ্ঠু প্রশাসনের প্রধান ভূমিকা পালন করে পুলিশ। অতীতে দেখা গেছে, পুলিশই রাতের আঁধারে ভোটের বাক্স পূরণ করেছে। পুলিশের ভেতরে ৫০% স্বচ্ছতা আনতে অন্তত ২-৩ বছর সময় লাগবে। একই পরিস্থিতি প্রশাসন, পিডিবি, আরইবি ও অন্যান্য সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
৫-৬ বছর আগে হাইকোর্টের এক রেজিস্ট্রার আমাকে বলেছিলেন, হাইকোর্টের ভেতরে ৫% সৎ বিচারক আছেন কি না, সন্দেহ। জেলা ও মহানগর আদালতের অবস্থা আরও নাজুক। নির্বাচন হলে মামলা হবেই। সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়া চালাতে হলে কমপক্ষে ৫০% ভালো মানুষ প্রয়োজন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে আমরা ড. ইউনূসের নেতৃত্বে নিরপেক্ষ সরকার পেয়েছি। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, সমাজ থেকে দুর্নীতি দূর হয়েছে। গত ১৫ বছরের আন্দোলনে যারা ত্যাগ স্বীকার করেননি, তারাই আজ বড় বড় গাড়িতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশ ভ্রমণ করছেন। অথচ সেই আন্দোলনে ২০০০ তরুণ-তরুণী প্রাণ উৎসর্গ করেছেন, তাদের কথা কেউ ভাবছে না।
বিডিআর বিদ্রোহে দক্ষ ৫৭ জন কর্মকর্তা প্রাণ হারিয়েছেন, কিন্তু তাদের বিচার এখনো হয়নি। দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির গভীর ক্ষত রয়ে গেছে। আজও দুর্নীতি চলছে। শুনেছিলাম, জাতিসংঘ এদেশে এসে বিগত দিনের দুর্নীতি ও প্রাণহানির উপর একটি রিপোর্ট দেবে। কিন্তু এখন কেউ সেই কথা বলে না।
আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল, তারা আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও সেনাবাহিনীকে দ্রুত ক্ষমতায় দেখতে চায় না। নদী-খাল-বিলের ভেতর যত জঞ্জাল আছে, তা পরিষ্কার করে তবেই নৌকা বা জাহাজ চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব। একইভাবে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক জঞ্জাল সরিয়ে নির্বাচন দিতে হবে।
আমরা ড. ইউনূসকে হারাতে চাই না। তিনি ক্ষমতা বা টাকার লোভী নন। তাকে সুস্থভাবে কাজ করতে দিন, যাতে তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেন। তার সততা ও আদর্শ দেশকে ভালো রাখলে আরও অনেক নির্বাচন সম্ভব হবে।
দেশে ৪০-৫০টি দল রয়েছে। কিন্তু তাদের ভেতরে কি গণতন্ত্র আছে? যদি গণতন্ত্র থাকে, তবে এমপি প্রার্থী নির্ধারণে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে দলীয় নেতারা সিদ্ধান্ত নেবেন, যেমনটি ব্রিটেন ও আমেরিকায় প্রচলিত আছে।
ভালো কার্যক্রমকে সামনে এগিয়ে যেতে দিন, নমিনেশন বাণিজ্য করতে দেবেন না।
*লেখক:*
সৈয়দ মোয়াজ্জেম হুসাইন
*প্রাক্তন চেয়ারম্যান, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড
