হ-বাংলা নিউজ: বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে ভারতের মন্তব্য ও বিবৃতি বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। এ পরিস্থিতিতে, দলটি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নীতিনির্ধারকদের মতে, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিশ্বাস করে দেশপ্রেম সবার আগে। তারা আরও জানায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে জনগণের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কাজ করবে বিএনপি।
৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশে বিশৃঙ্খলার ষড়যন্ত্র চলছে বলে দলটি মনে করছে, এবং ভারতের অব্যাহত সম্পৃক্ততাও তারা সন্দেহ করছে। তারা বলছে, ভারতের গণমাধ্যম বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক হামলা ও নির্যাতনের তেমন কোনো ঘটনা না ঘটলেও তা ভিন্নভাবে প্রচার করছে, যা পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছে। দলের নেতাদের পর্যবেক্ষণে, ভারতের বক্তব্য উসকানিমূলক। তারা আরো উল্লেখ করেছেন যে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পরও ভারত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি, যা বাংলাদেশের জনগণের ক্ষোভের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হওয়া উচিত পারস্পরিক স্বার্থ ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে। বিএনপি ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক চায়, কিন্তু ভারতের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে, তারা বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক না রেখে একটি বিশেষ দলের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। এ ধরনের নীতিকে ‘একচোখা’ মনে করছেন তারা এবং ভারতের নীতিতে পরিবর্তন চান।
গত রোববার, বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন ভারতীয় দূতাবাসের দিকে পদযাত্রা করে এবং স্মারকলিপি দেয়, যেখানে মানুষের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল। এছাড়া, আগামী বুধবার, বিএনপির তিন অঙ্গসংগঠন (জাতীয়তাবাদী যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল) ঢাকার আখাউড়া সীমান্ত পর্যন্ত লংমার্চ করবে, যার ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে। এই কর্মসূচি ভারতবিরোধী, এবং ভবিষ্যতে আরও এমন কর্মসূচি আসবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, “আমাদের পররাষ্ট্রনীতি পরিষ্কার, আমরা সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই, কিন্তু কোনো প্রভুত্ব নয়। ভারত যদি বাংলাদেশের জনগণের মনোভাব না বোঝে, তাহলে দুই দেশের সম্পর্ক মুখোমুখি দাঁড়াবে। ভারত নেপাল, মালদ্বীপ, ভুটান এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক হারিয়েছে, এখন বাংলাদেশও সেই পথে চলতে পারে।”
সম্প্রতি, এক হিন্দুধর্মীয় নেতাকে গ্রেফতারের পর ভারতের হিন্দুত্ববাদী কিছু সংগঠন বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা চালায়, এবং পতাকা অবমাননা করে। এ পরিস্থিতি নিয়ে দলের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, যার ফলে বিএনপি মাঠের কর্মসূচি দিয়েছে।
এদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি সম্প্রতি ঢাকায় এসে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, ভারত বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পর্ক চায়। তবে বিএনপির নেতারা এই মন্তব্যকে সন্দেহের চোখে দেখছেন, কারণ তারা ভারতের গতকালের কর্মকাণ্ডে নেতিবাচকতার লক্ষণ পাচ্ছেন।
এছাড়া, বিএনপির ভারতবিরোধী মনোভাব বিশেষত ৫ আগস্টের পর থেকে বাড়তে থাকে, এবং তারা এখন ভারতকে সতর্ক করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, তাদের এই অবস্থান জনগণ ও বিদেশিদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
গণ-অভ্যুত্থানের পর ভারতীয় মিডিয়া বাংলাদেশে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেছে বিএনপি, যা আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। তারা অভিযোগ করছে যে, ভারতের রাজনৈতিক নেতারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কূটনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে মন্তব্য করেছেন।
তিন সংগঠনের লংমার্চ আগামীকাল (বুধবার) ঢাকা থেকে আগরতলা (আখাউড়া সীমান্ত) পর্যন্ত হবে, যেখানে ভারতবিরোধী কর্মসূচি পালিত হবে। বিএনপির নেতা আব্দুল মোনায়েম মুন্না জানিয়েছেন, ভারত শেখ হাসিনার সমর্থন করা বন্ধ না করলে বিএনপি তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে।
এছাড়া, বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, ভারত নিজেদের দেশের সংখ্যালঘু জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে, তাই তাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মন্তব্য করার কোনো নৈতিক অধিকার নেই।
