জনপ্রতিনিধিদের প্রস্তাব: নির্দলীয় সরকারের অধীনে স্থানীয় নির্বাচনের আহ্বান, মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন

হ-বাংলা নিউজ: 

নির্দলীয় সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব দিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা। তারা সুশৃঙ্খল ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য বর্তমান সরকারের মেয়াদ বাড়ানোরও অনুরোধ জানিয়েছেন। তাদের মতে, দলের প্রতীকের পরিবর্তে নির্দলীয় প্রতীকে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন করা উচিত।

রোববার জাতীয় সংসদে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এসব প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্থানীয় সরকারের ২০ জন প্রতিনিধি।

বৈঠক শেষে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা unanimously বলেছেন যে, নির্বাচন নির্দলীয় ভিত্তিতে হওয়া উচিত। তারা আরও বলেন, বর্তমান নির্বাচন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা উচিত এবং এটি সংসদীয় পদ্ধতির বাইরে রাখা উচিত। নারী প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি চালু করারও প্রস্তাব এসেছে, যাতে এটি আরও কার্যকর এবং অর্থবহ হয়।

এছাড়া, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে আরও অর্থবহ করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি এবং সংসদ সদস্যদের ভোটে তা করার প্রস্তাবও উঠেছে। অনেকেই বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচন থেকে আগে বা পরে স্থানীয় নির্বাচনের আয়োজন করা যেতে পারে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই চান, সব নির্বাচন নির্দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজন করা হোক, এবং এজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। তারা রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসক (ডিসি) না রেখে, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তাদের নিয়োগের পক্ষেও মত দিয়েছেন।

ড. বদিউল আলম মজুমদার আরও জানান, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা তাদের অপসারণ নিয়ে মনোক্ষুণ্ণতা প্রকাশ করেছেন, এবং তারা চান যে, সত্যিকারের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক, যেখানে সংসদ সদস্য ও কর্মকর্তারা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থাকবেন। তারা আরও বলেছেন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা কমিয়ে নারীদের নির্বাচনের আরও সুযোগ দিতে হবে, এবং স্থানীয় সরকারকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

তিনি বলেন, “প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারেও প্রবল দাবি উঠেছে।” জনপ্রতিনিধিরা আরও বলেছেন যে, তারা প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ ভবনে এসে সম্মানিত বোধ করেছেন এবং আশা করেন ভবিষ্যতে এখানে কোনো অসুন্দর ব্যক্তি প্রবেশ না করতে পারে।

এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কমিশন তার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করবে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে এটি শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন (বুলবুল) বলেন, তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ চান এবং কমিশনকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে ইসি কর্মকর্তাদের চাচ্ছি, ডিসি বা ইউএনও নয়।” তারা দ্রুত নির্বাচনের আয়োজনেরও প্রস্তাব দিয়েছেন।

এছাড়া, বৈঠকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব উঠে আসে, যেমন:

  • নির্বাচনের দিন যেন রাতে না হয়
  • আগের সরকারের আমলের কেউ যেন পুনর্বহাল না হন
  • সংরক্ষিত নারী আসনে ঘূর্ণায়মান পদ্ধতি চালু করা
  • মেয়রের ক্ষমতা কমানোর জন্য প্যানেল থেকে একজন পুরুষ এবং একজন নারীকে স্বাক্ষরের ক্ষমতা দেওয়া
  • উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদের ক্ষমতায়িত করা
  • ভোটের সময় আঙুলের ছাপ নেওয়া, যাতে একজন ভোটার অন্যজনের ভোট দিতে না পারে
  • স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার জন্য একটি সমন্বিত আইন প্রণয়ন করা
  • ভোটাররা যদি তাদের নির্বাচনি এলাকার বাইরে থাকেন, তাহলে প্রবাসী হলেও ই-ভোটিংয়ের মাধ্যমে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নিশ্চিত করা।

এ প্রস্তাবগুলির বাস্তবায়নের মাধ্যমে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী এবং স্বচ্ছ করার জন্য অনেক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *