হ-বাংলা নিউজ: কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা*
সম্প্রতি কলকাতার পর আগরতলায় বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলার ঘটনা ঘটেছে। কলকাতায় আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও আগরতলায় পুলিশের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত বিতর্কিত। এই হামলায় দূতাবাসের চত্বরে প্রবেশ করে ভবন ভাঙচুর, জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে ফেলা, এবং কর্মীদের লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার পর আগরতলা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং প্রোটোকলের বিরুদ্ধে যায়।
### আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দায়িত্ব
জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, একটি দেশের দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোস্ট দেশের দায়িত্ব। অথচ আগরতলায় এই দায়িত্ব পালনে ত্রিপুরা পুলিশ সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। বিপরীতে, বাংলাদেশে ভারতীয় দূতাবাসের নিরাপত্তার তুলনা টেনে দেখা যায়, বাংলাদেশে কোনো হালকা ভাঙচুরের ঘটনায়ও কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে, বারিধারায় ভারতীয় দূতাবাসের বাইরে হালকা ভাঙচুরের ঘটনায় বাংলাদেশি নিরাপত্তা বাহিনীর পাশাপাশি দূতাবাসের নিজস্ব সশস্ত্র কর্মীরা গুলি ছুঁড়েছে। কিছু প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, সেখানে হিন্দি ভাষায় কথা শোনা গেছে। যদিও এ বিষয়ে কোনো নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি, এটি ভারতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার সক্রিয়তার দিকটি প্রকাশ করে।
### মমতা ব্যানার্জির মন্তব্য ও প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলার দিনই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি জাতিসংঘের মাধ্যমে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর আহ্বান জানান। মমতার পূর্বের ইতিবাচক অবস্থান সত্ত্বেও এই বক্তব্য তার নীতির বিপরীত বলে মনে হয়। শুভেন্দু অধিকারীর ধর্মীয় রাজনীতির চাপে তিনি এ ধরনের অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন। তবে এই বক্তব্য বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং শক্ত প্রতিবাদের দাবি রাখে।
### বাংলাদেশ সরকারের প্রতিক্রিয়া
বাংলাদেশ সরকার আগরতলায় দূতাবাসে হামলার পর ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে মমতার বক্তব্যের ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক অবস্থান দেখা যায়নি। একই ঘটনা যদি ভারতের চট্টগ্রামস্থ দূতাবাসে ঘটত, তবে ভারতের প্রতিক্রিয়া যে অনেক কঠোর হতো, তা অনুমেয়। এই ঘটনার গুরুত্ব বুঝে বাংলাদেশের উচিত মমতার বক্তব্যের জন্য ব্যাখ্যা চেয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
### মিডিয়া ও সুশীল সমাজের নীরবতা
বাংলাদেশের মিডিয়ায় এ ঘটনা যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছে না। একই ঘটনা পাকিস্তানে ঘটলে বাংলাদেশের মিডিয়া এবং সুশীল সমাজের প্রতিক্রিয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন হতো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সোল এজেন্ট ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের সম্পূর্ণ নীরবতা প্রশ্ন তুলেছে। বড় রাজনৈতিক দলগুলো বিবৃতি দিলেও ইসলামী দলগুলো এখনো কার্যকর কর্মসূচি নেয়নি।
### সীমান্তে উত্তেজনা ও সম্ভাব্য হুমকি
ভারতীয় গণমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে মিজাইল স্থাপন এবং জঙ্গি বিমান প্রস্তুত রাখার খবর আসছে। এদিকে ব্রিটেনের ভ্রমণ সতর্কতা বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। বিশেষত পার্বত্য চট্টগ্রামে সন্ত্রাসী হামলার শঙ্কা তুলে ধরা হয়েছে।
### জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এ ধরনের আহ্বান এসেছে। জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থ রক্ষায় বিশ্বে একটি শক্ত অবস্থান গ্রহণ করা সম্ভব।
বর্তমান পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। দূতাবাসে হামলা এবং মমতার মন্তব্যের মতো ঘটনাগুলো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি সরাসরি আঘাত। সরকারের উচিত শক্ত অবস্থান গ্রহণ করা এবং আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করা। পাশাপাশি দেশের জনগণ, মিডিয়া, এবং সুশীল সমাজকে জাতীয় স্বার্থে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
লেখক : ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম রেজাউল করিম, চেয়ারম্যান – বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী গবেষণা কেন্দ্র
