হ-বাংলা নিউজ: সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা বলেছেন, “পুলিশ বাহিনী এখন সবকিছুতে ভেঙে পড়েছে। পুলিশে মিলিটারাইজেশনের ফলে যা ক্ষতি হয়েছে, তা স্পষ্ট। এখন পুলিশের মধ্যে মিলিটারি ব্রেন ঢুকে পড়েছে, যার কারণে পুলিশে সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। পলিটিক্যাল ভিশন ছাড়া কোনো সংস্কার কার্যকর হবে না। তাছাড়া জনগণকে সম্পৃক্ত করে পুলিশিংয়ের কাজ করলে বড় সংখ্যক পুলিশ সদস্যের প্রয়োজন হবে না।”
শনিবার (৩০ নভেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন ‘৫৩ বছর পরও পুলিশ বাহিনী কেন জনবান্ধব হয়ে উঠছে না? পুলিশ সংস্কার: কেন? কোন পথ?’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
নুরুল হুদা আরও বলেন, “আমাদের মতো বিভাজিত সমাজে পুলিশিং অত্যন্ত কঠিন কাজ। পুলিশ এখন পাবলিক সার্ভেন্ট থেকে ডোমেস্টিক সার্ভেন্ট হয়ে গেছে। এছাড়া, যদি অন্য বাহিনী থেকে কাউকে পুলিশের কোনো ইউনিটে আনা হয়, তবে তাকে অন্তত ছয় মাস পুলিশিংয়ের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।”
আলোচনা সভায় পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য গোলাম রসুল জানান, “আমরা গত দুই মাস ধরে বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করছি এবং জনগণের মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছি। মিডিয়া ও অন্যান্য মাধ্যমে জরিপ চালানো হচ্ছে, যেখানে জনসাধারণের মতামতকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি জাতীয় জননিরাপত্তা কমিশন গঠনের বিষয়ে, যা একটি স্থায়ী কমিশন হবে এবং এর একটি সচিবালয় ও গবেষণাগার থাকবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সিভিল সোসাইটি নিয়ে সম্মিলিতভাবে এটি গঠন করা হবে।”
সুপ্রিমকোর্টের সাবেক রেজিস্ট্রার ও সাবেক জেলা জজ ইকতেদার আহমেদ বলেন, “পুলিশ বাহিনীকে সংস্কার করতে হলে শুধু পুলিশ নয়, সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের সংস্কার করতে হবে। বিশেষ করে পুলিশের ইনফোর্সমেন্ট, তদন্ত এবং বিচার বিভাগের শৃঙ্খলা ঠিক হলে পুলিশ একটি আদর্শ বাহিনীতে রূপ নিতে পারে।”
সাবেক ডিআইজি মেজবাউন্নবী বলেন, “এই ছাত্র আন্দোলনের পর, আমার মনে হয় ভালো পুলিশ পাওয়ার এটি শেষ সুযোগ, বারবার এমন সুযোগ আসবে না।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট সৈয়দ আবদুল্লাহ বলেন, “পুলিশে চাকরি বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। যদি একজন পুলিশ সদস্য বাড়িঘর বা জমি বিক্রি করে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরিতে যোগ দেয়, তাহলে সে তার সেই টাকা তুলতে অন্যায় পথে যাবে।”
হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে এ সভায় আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম, বিশিষ্ট দার্শনিক ও গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির ভিসি ড. আনিসুজ্জামান, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মাজহারুল হক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নেতা মাওলানা মনির হোসাইন কাসেমী, সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি ইয়াসমিন গফুর, ফ্রন্ট পেইজ সম্পাদক সেলিম খান, সাংবাদিক আহমেদ সেলিম রেজা, আইনের শিক্ষক ড. আহমেদুজ্জামান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেত্রী জাকিয়া শিশির, হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. পারভেজ এবং সাবেক পুলিশ কনস্টেবল মান্নান প্রমুখ।
