তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন

হ-বাংলা নিউজ: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করা হয়েছে, যেখানে ১০টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে।

এই আবেদন বুধবার সুপ্রিম কোর্টে জমা দেওয়া হয় এবং এটি ৮০৭ পৃষ্ঠার। আগামী রোববার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এটি উপস্থাপন করা হবে বলে জানান জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহিদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আবেদনের বিষয়বস্তু তুলে ধরেন।

জয়নুল আবেদীন বলেন, আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আদালতে প্রকাশিত সংক্ষিপ্ত আদেশ সংশোধনের পর পূর্ণাঙ্গ রায় থেকে বাদ দেওয়া এবং তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের অবসরের ১৮ মাস পর রায় প্রকাশ করা বিচার বিভাগীয় প্রতারণা। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে একটি ফৌজদারি মামলা চলমান রয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের মৌলিক স্তম্ভকে ধ্বংস করা হয়েছে এবং একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, সংবিধান একটি জীবন্ত রাজনৈতিক দলিল, এবং সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী এর কার্যকারিতা বজায় রাখতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের দায়িত্ব হল সংবিধানকে প্রাসঙ্গিকভাবে ব্যাখ্যা করা, যান্ত্রিকভাবে নয়। তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিতে এ রায় পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে।

জয়নুল আবেদীন উল্লেখ করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং ত্রয়োদশ সংশোধনীর মৌলিক মর্যাদা অর্জন করে। সুপ্রিম কোর্ট এই মৌলিক স্তম্ভকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করতে পারে না।

২০১১ সালের ১০ মে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে। সেই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য এই আবেদন করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে নজিরবিহীন কারচুপির মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়, ফলে গণতন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়ে এবং একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।

জয়নুল আবেদীন বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ অগাস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। সুপ্রিম কোর্টের মতামতের ভিত্তিতে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় এবং মানুষ মুক্তি পায়।

১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিশেষ করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করে, যা গণতন্ত্রকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক রূপ’ দেয়।

তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই সংশোধন করে তৎকালীন আওয়ামী সরকার, যা বিচার বিভাগীয় প্রতারণা ছাড়া কিছু নয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব অ্যাডভোকেট কায়সার কামাল, ফোরামের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, যুগ্ম মহাসচিব মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির এবং সহসভাপতি গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী আলাল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *