হ-বাংলা নিউজ: এখন পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে যে, রপ্তানি ও আমদানির নামে ২৫৫ কোটি ডলার দেশে আসেনি। এই অর্থের একটি বড় অংশ একাধিক কোম্পানির বিনিয়োগকারী পিতাপুত্র সম্মিলিতভাবে পাচার করেছেন। দেশে পিতার কোম্পানি থেকে পণ্য রপ্তানি হয়েছে বিদেশে পুত্রের কোম্পানিতে, এবং বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির জন্য দেশ থেকে টাকা পাঠানো হয়েছে পুত্রের কোম্পানিতে। কিন্তু, টাকা বা পণ্য কোনোটাই দেশে আসেনি। মেয়াদ শেষে অতিরিক্ত সময়ের পরও এসব অর্থ দেশে আনা হয়নি। এ সংক্রান্ত ৪৫ জন উদ্যোক্তাকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং সিআইডি তাদের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেছে।
রপ্তানির নামে প্রায় ৬৫ কোটি ডলার পাচার করা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আসেনি এমন প্রায় ৮২ কোটি ডলার মূল্যের পণ্য দেশে আনা হয়নি। তামাদি রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ১০০ কোটি ডলারের বেশি, যা দেশে আসেনি। বেক্সিমকো গ্রুপ প্রায় ৮ কোটি ডলার আনেনি। এসব বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিআইডি এর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
বেক্সিমকো গ্রুপের মালিক সালমান এফ রহমান এবং তার ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানের মধ্যে এই পাচার কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। দেশের পিতার কোম্পানি থেকে উৎপাদিত পণ্য লন্ডনে ছেলের কোম্পানিতে রপ্তানি করা হয়েছে, কিন্তু মূল্য দেশে আসেনি। প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে প্রায় ৮ কোটি ডলার পাচার হয়েছে।
অন্য শিল্পগ্রুপগুলোও একইভাবে পাচার কার্যক্রমে জড়িত। বিসমিল্লাহ গ্রুপ প্রায় ১২০০ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করেও মূল্য দেশে আনেনি এবং ব্যাংকের মাধ্যমে পাচার করেছে। ক্রিসেন্ট গ্রুপ প্রায় ২০০০ কোটি টাকার রপ্তানি মূল্য তামাদি করেছে। এস আলম গ্রুপের রপ্তানি আয়ের বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং আকিজ গ্রুপ ২০০ কোটি টাকার রপ্তানি আয় দেশে আনেনি।
নিয়ম অনুযায়ী, পণ্য রপ্তানির ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে অর্থ দেশে আনতে হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে না আনলে উদ্যোক্তাকে যথাযথ কারণ জানাতে হয়, এবং তা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানো হয়। বকেয়া রপ্তানি আয় দেশে না আনলে নতুন এলসি খোলার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দেয়।
নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বকেয়া রপ্তানি আয়ের সব তথ্য সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোকে উদ্যোক্তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে বলা হচ্ছে। যারা রপ্তানি আয় দেশে আনেনি এবং ফোর্স লোন তৈরি করে দায় শোধ করেছে, তাদের ব্যবসা অনুসন্ধান করা হচ্ছে। যারা বিদেশে পালিয়ে আছেন, তাদের আইনের আওতায় আনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক, বিএফআইইউ ও সিআইডি কাজ করছে এবং ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে।
