যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের চুলায় রান্না কি এখনই বন্ধ হচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্রে রান্নার কাজে গ্যাস ব্যবহার নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক শুরু হয়েছে। ৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় কনজিউমার প্রোডাক্ট সেফটি কমিশনের (সিপিএসসি) কমিশনার রিচার্ড ট্রুমকা বলেছেন, প্রতিষ্ঠানটি গ্যাসের চুলার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা ভাবছে। সিপিএসসি গ্যাসের চুলাকে ‘লুকানো বিপদ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রান্নার কাজে গ্যাস ব্যবহার নিয়ে এমন বিতর্কে রক্ষণশীল দলের অনেকে ক্ষুব্ধ। অনেকে এ জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দায়ী ভাবছেন। টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য রনি জ্যাকসন টুইটে বলেছেন, ‘যদি হোয়াইট হাউসের পাগলেরা আমার চুলা নিতে আসে, তাহলে আমার হিম শীতল হাত থেকে নিতে পারে। এসো এবং নিয়ে যাও!!’টেলিভিশনের রন্ধনশিল্পী অ্যান্ড্রু গ্রুয়েল নীল রঙের একটি টেপ দিয়ে নিজেকে গ্যাসের চুলার সঙ্গে বেঁধে প্রতিবাদ জানান। ডেমোক্র্যাটদের কয়েকজনও প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের সিনেটর জো ম্যানচিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিকে ‘বিপর্যয়ের রেসিপি’ বলেছেন। গ্যাসের চুলা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে কেন এত বিতর্ক এবং তাতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে ৩৮ শতাংশ বাড়িতে রান্নার কাজে গ্যাস স্টোভ ব্যবহার করা হয়। তবে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে এই হারে তারতম্য রয়েছে। যাঁরা গ্যাসের চুলা ব্যবহারের পক্ষে, তাঁরা বলছেন, এই চুলা ব্যবহার তুলনামূলক সস্তা ও বৈদ্যুতিক চুলা থেকে কার্যকর বিকল্প। এই চুলায় যে খাবার রান্না হয়, তার স্বাদও তুলনামূলক ভালো হয়।

বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান দ্য আমেরিকান গ্যাস অ্যাসোসিয়েশন কুকিংউইথগ্যাস.অর্গে গ্যাসের চুলায় রান্না করার রেসিপি প্রকাশ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্পনসর করা পোস্টগুলোতে অনেকেই নিজেদের প্রতিষ্ঠানের গ্যাসের চুলা নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। তবে গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত এসব সরঞ্জাম থেকে নাইট্রোজেন ডাই–অক্সাইড ও অন্যান্য দূষিত গ্যাস নির্গত হতে পারে। এটি স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হয়। বাতাস চলাচলের সুব্যবস্থা করে দূষণ কমিয়ে আনা যেতে পারে। তবে আবদ্ধ ঘরে দূষণ খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। জ্বলন্ত গ্যাসের চুলা থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড, মিথেনসহ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়।দ্য ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট গ্যাসের চুলার বদলে বৈদ্যুতিক চুলা ব্যবহারে গ্রাহকদের উৎসাহী করতে কাজ করছে। চুলার জন্য ৮৪০ ডলার পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রে ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ, গ্যাস ও কয়লা পুড়িয়ে উৎপাদন করা হয়। এ কারণে গ্যাসের বিকল্প সব সময় পরিবেশবান্ধব হয় না। জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাতে কিছু ডেমোক্রেটিক সিটি কাউন্সিল গ্যাসের ব্যবহার সীমিত করতে আইন পাস করেছে।

২০১৯ সালে ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বার্কেলি শহরে নতুন ভবনগুলো গরম রাখতে ও রান্নার কাজে জ্বালানির ব্যবহার নিষিদ্ধ করে। ক্যালিফোর্নিয়ার রেস্তোরাঁ অ্যাসোসিয়েশন এর বিরুদ্ধে মামলা করার চেষ্টা করে। তবে বিচারক তা খারিজ করে দেন। নিউইয়র্ক সিটিতে এ বছর নতুন কিছু ভবনে গ্যাস নিষিদ্ধ করা হবে। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে একই ধরনের প্রস্তাবিত পরিকল্পনা গত বছর দেশটির আইনসভায় পাস হয়নি। তবে নিউইয়র্কের ডেমোক্রেটিক গভর্নর ক্যাথি হোচুল আবার চেষ্টা করতে পারেন। ২০২১ সাল থেকে ২০টিরও বেশি অঙ্গরাজ্য, যেগুলোর বেশির ভাগই রিপাবলিকানরা শাসন করেন এবং যেগুলো গ্যাস সরবরাহ করে, সেসব রাজ্যে এই নিষেধাজ্ঞাগুলো স্থগিত করতে আইন চালু হয়েছে।

১১ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ট্রুমকা টুইটে বলেন, রান্নার কাজে গ্যাস ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো পরিকল্পনা বাইডেন প্রশাসনের নেই। সিপিএসসিও কারও গ্যাসের চুলা নিতে যাবে না। তবে যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা আসে, তাহলে তা নতুন চুলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। যাদের রান্নাঘরে চুলা আছে, তারা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না। সিপিএসসি এখন নতুন পণ্যের মান উন্নত করার ওপর জোর দিচ্ছে। গ্যাস স্টোভ ব্যবহারের সমর্থকদের ঠান্ডা হতে সময় দেওয়া উচিত বলেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *