হ-বাংলা নিউজ:
যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিটি মিনিস্টার টিউলিপ সিদ্দিক সাম্প্রতিক সময়ে সম্পত্তি-সংক্রান্ত বিষয় ও ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চাপের মধ্যে রয়েছেন।
সম্প্রতি তার কাছে বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট পাওয়ার তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, যেগুলোর মালিক হতে শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের ভূমিকা থাকতে পারে। এই বিষয়ে তিনি একটি স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
বাংলাদেশে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।
এই বিষয়গুলো নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমগুলোর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন টিউলিপ সিদ্দিক। ফিনান্সিয়াল টাইমস, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য টাইমসসহ বিভিন্ন মিডিয়া হাউসে তাকে নিয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
আগে আওয়ামী লীগ বা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে তার সম্পর্ক নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্কের মুখে পড়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোরের সাংবাদিক অ্যালেক্স থমসনের প্রশ্নের পর টিউলিপ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি সাংবাদিককে বলেন, “আপনি জানেন কি, আমি একজন ব্রিটিশ এমপি এবং লন্ডনে জন্মেছি?”
এদিকে, ফিনান্সিয়াল টাইমসে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ব্যারিস্টার আরমান দাবি করেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার পর বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার ঢাকার বাসায় অভিযান চালায় এবং তার স্ত্রীর কাছে ‘মুখ বন্ধ’ রাখার হুমকি দেয়।
বর্তমানে, টিউলিপ সিদ্দিক আওয়ামী লীগ বা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয় থেকে নিজেদের দূরে রাখার চেষ্টা করছেন। তার মুখপাত্ররা দাবি করছেন, যুক্তরাজ্যে তার সম্পত্তির মালিকানার সাথে আওয়ামী লীগের প্রতি সমর্থনের কোনো সম্পর্ক নেই।
এছাড়া, তার বিরুদ্ধে অনেক প্রশ্ন রয়েছে, বিশেষত কেন তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের ঘনিষ্ঠদের থেকে সম্পত্তি পেয়েছেন।
টিউলিপ সিদ্দিক, যিনি যুক্তরাজ্যে দুর্নীতিবিরোধী নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের দায়িত্বে আছেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর স্বতন্ত্র উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাসকে এই ব্যাপারে একটি তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
তবে সমালোচকরা বলেন, টিউলিপ সিদ্দিক আসলে তার পরিবারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের থেকে নিজেকে দূরে রাখার কথা বলে প্রকৃত সম্পর্ক গোপন করার চেষ্টা করছেন।
ঢাকাভিত্তিক সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান বলেন, “টিউলিপের দাবি, তার আওয়ামী লীগ বা বাংলাদেশি রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু বাস্তবে তিনি আওয়ামী লীগের এক বড় সুবিধাভোগী।”
অন্যদিকে, রোজ উইফেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র রিসার্চ অফিসার, বলেন, “শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারানোর পর থেকে টিউলিপ সিদ্দিকের ওপর আরও বেশি অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।”
২০০৯ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর টিউলিপ সিদ্দিক লন্ডনে আওয়ামী লীগের ইউকে ও ইইউ লবিং ইউনিটে কাজ করেছিলেন। তিনি দলের পক্ষ থেকে বিবিসি ওয়ার্ল্ড নিউজে বক্তৃতা দিয়েছিলেন।
এছাড়া, ২০১৩ সালে টিউলিপ সিদ্দিক রাশিয়ায় শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন, যেখানে রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। বাংলাদেশের তদন্তকারী সংস্থাগুলো এই প্রকল্পের সঙ্গে তার পরিবারের সম্পৃক্ততা খতিয়ে দেখছে।
২০১৫ সালে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন, যেখানে শেখ হাসিনা তাকে অভিনন্দন জানান। ২০১৫ সালে সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে টিউলিপ তার খালার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন, যদিও সিআরআইকে বিতর্কিত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
টিউলিপ সিদ্দিকের বোন আজমিনা সিদ্দিক ও ভাই রাদওয়ান সিদ্দিক সিআরআই-এর ট্রাস্টি ছিলেন।
এছাড়া, ২০১৭ সালে এক অনুষ্ঠানে টিউলিপ সিদ্দিক বলেছেন, তার খালা শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এবং বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি তাকে রাজনীতিতে যোগ দিতে অনুপ্রাণিত করেছে।
এদিকে, ২০১৭ সালের পর টিউলিপকে তার খালার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি চীনা বা রাশিয়ান কোনো ব্যক্তিরা এই ধরনের সম্পর্ক প্রকাশ করতেন, তাহলে সেটি বিদেশি হস্তক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হত।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ব্রিটিশ সরকারের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনামলে পাচার হওয়া অর্থ দিয়ে কেনা সম্পত্তিগুলো তদন্ত করছে, যার মধ্যে টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনভিত্তিক সম্পত্তিও রয়েছে।
যদিও এই তদন্ত চলছে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেছেন, “টিউলিপ সিদ্দিক সঠিক পদক্ষেপ নিয়েছেন। তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং আমি তার প্রতি আস্থা রাখি।”
