নির্বাচন সংস্কারের পর ২০২৫ বা ২০২৬ সালের শুরুতে হতে পারে জাতীয় নির্বাচন: প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস

হ-বাংলা নিউজ: সংস্কার শেষ হলে ২০২৫ সালের শেষভাগে অথবা ২০২৬ সালের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে, জানিয়েছেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তবে, নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুসারে সংস্কারের পরিমাণ ও জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সময়সীমা আরও ছয় মাস বাড়তে পারে।

সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন ড. ইউনূস। আগস্ট মাসে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি ছিল তার তৃতীয় ভাষণ।

প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমি বারবার আপনাদের কাছে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রধান সংস্কারগুলো সম্পন্ন করার আবেদন জানিয়েছি। তবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে, যদি নির্বাচনের জন্য অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে যদি আরও বড় সংস্কার করা হয়, যেমন নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস সময় বাড়ানো হতে পারে।”

ড. ইউনূস আরও বলেন, “যে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা আমরা ধারণ করছি, তা বাস্তবায়নে প্রতিটি কমিশন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার ও সংবিধান সংস্কার কমিশন বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই দুটি কমিশনের সুপারিশের উপরেই আমাদের পরবর্তী নির্বাচন প্রস্তুতি এবং নির্বাচনের তারিখ নির্ভর করবে।”

তিনি জাতির উদ্দেশে আরও বলেন, “এখন থেকে সবাই মিলে এমন একটি ঐতিহ্য তৈরি করতে পারি, যাতে স্থানীয় নির্বাচনসহ সকল নির্বাচনে প্রথমবারের ভোটাররা ১০০ শতাংশের কাছাকাছি ভোটদান নিশ্চিত করবে। এটি নিশ্চিত করতে পারলে ভবিষ্যতে কোনো সরকার মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার সাহস করবে না।”

প্রধান উপদেষ্টা জানান, “বড় খবর হলো, প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়ে গেছে। তারা তাদের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন এবং আগামী সরকার গঠন প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন। তাদের হাতে এখন অনেক কাজ।”

তিনি বলেন, “প্রথমেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা। এটি ইতোমধ্যেই কঠিন কাজ, আর এখন এটি আরও কঠিন হবে কারণ গত তিনটি নির্বাচনে ভোটাররা অংশগ্রহণ করতে পারেননি। গত ১৫ বছরে যারা ভোটার হওয়ার যোগ্য হয়েছেন, তাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এটি একটি বড় কাজ এবং ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরিপ্রেক্ষিতে গলদ রাখার কোনো সুযোগ নেই।”

ড. ইউনূস আরও বলেন, “এবারের নির্বাচনে প্রথমবারের ভোটাররা শতকরা ১০০ ভাগের কাছাকাছি ভোট দিতে পারে—এমন একটি ঐতিহ্য গড়ার জন্য নির্বাচন কমিশন, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আমার আহ্বান, সবাই মিলে এই লক্ষ্য অর্জনে সৃজনশীল উদ্যোগ গ্রহণ করি।”

তিনি আরও বলেন, “নতুন ভোটারের পাশাপাশি যারা পূর্বে ভোটার তালিকায় ছিল, তাদের তালিকায় নাম রয়েছে কিনা তাও নিশ্চিত করতে হবে এবং বিশেষভাবে ভুয়া ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে।”

প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছেন, “এবার আমরা প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটদান নিশ্চিত করতে চাই। অতীতে এই বিষয়ে অনেক আশ্বাস শুনেছি, তবে এই সরকারের অধীনে এটি বাস্তবায়িত হওয়া উচিত। এজন্য একটি নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে।”

তিনি শেষে বলেন, “সবকিছু সময়সাপেক্ষ। নির্বাচন প্রক্রিয়া আরও উন্নত করতে, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে চাইলে, নির্বাচন কমিশনকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *