শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি বন্ধের পক্ষে নন শিক্ষার্থীরা, তবে কাঠামোর সংস্কার চান তারা

হ-বাংলা নিউজ:

শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি বন্ধের পক্ষে নন শিক্ষার্থীরা, তবে তারা বর্তমান কাঠামো সংস্কারের পক্ষে। তাদের মতে, এখানে রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা নয়, শিক্ষার্থীদের চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। তারা চান, ডাকসু নির্বাচন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হোক। একইসঙ্গে, দেশের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সিট বাণিজ্য চলবে না, অছাত্ররা সেখানে অবস্থান করতে পারবে না, এবং বহিরাগত শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করতে পারবে না।

শুক্রবার সকালে যমুনা টেলিভিশন কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ‘শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্রের চর্চা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এসব বিষয় তুলে ধরেন।

এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন যৌথভাবে করেছে যমুনা টেলিভিশন ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল, সহযোগিতায় ছিল ইউনাইটেড স্টেটস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি)।

যমুনা টেলিভিশনের প্লানিং অ্যান্ড অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রোকসানা আনজুমান নিকোলের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এম জহির উদ্দিন স্বপন, নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. নাভিন মুরশিদ, সিনিয়র সাংবাদিক তৌহিদুল ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মানসুরা আলম, ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মো. আবু সাদিক কায়েম, ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক অর্নি আনজুম এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুসরাত জাহান শামামা।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি থাকলে ক্ষতি কী, না থাকলে কী—এটি ভাবা দরকার। তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি তখনই প্রয়োজন হয়, যখন দেশের পরিস্থিতি সংকটপূর্ণ হয়ে ওঠে। শিক্ষার্থী আন্দোলন পরিবর্তনের শক্তি। তিনি আরও বলেন, আদর্শিক রাজনীতি সক্রিয় করতে হলে ডাকসু নির্বাচন নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা পরিষদের বৈঠকও নিয়মিত হওয়া প্রয়োজন।

ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ছাত্র রাজনীতির লক্ষ্য হতে হবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা। তিনি শিক্ষার্থীদের খাবারের মান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়েও সচেতন থাকার পরামর্শ দেন এবং অন্যায় ও অপরাধের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।

এম জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ছাত্র রাজনীতি হবে আদর্শিক ও ন্যায়ের ভিত্তিতে, এবং শিক্ষাঙ্গনে একটি সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা থাকা জরুরি। রাজনৈতিক চর্চা শিক্ষার, দেশ ও দেশের কল্যাণে হতে হবে।

মো. আবু সাদিক কায়েম বলেন, ছাত্র রাজনীতি অবশ্যই ছাত্রদের কল্যাণে এবং আদর্শিক ভিত্তিতে হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ছাত্র রাজনীতি জোর করে কিছু করানোর, শোডাউন করার বা চাঁদাবাজির ক্ষেত্রে পরিণত হওয়া উচিত নয়। ২৪ ছাত্র আন্দোলনের পর ছাত্র রাজনীতির যৌক্তিক সংস্কার দাবি করেন তিনি।

উমামা ফাতেমা বলেন, রাষ্ট্র সিদ্ধান্ত নিতে পারে না যে শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি থাকবে না, তবে বর্তমান দলীয় লেজুরবৃত্তিক রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। তিনি জানান, শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি বন্ধ নয়, তবে কাঠামো সংস্কার প্রয়োজন, এবং শিক্ষার্থীরা সেই সংস্কারই চান।

গোলটেবিল আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন যমুনা টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. নাভিন মুরশিদ, অর্নি আনজুম, মানসুরা আলম ও নুসরাত জাহান শামামা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *