বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে বিপুল ব্যয়, কিন্তু উন্নয়ন সন্তোষজনক নয়

হ-বাংলা নিউজ: ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করেছে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার, যা পুরো এডিপির ৪১.৩ শতাংশ। আগের অর্থবছরে এ খাতে ব্যয় হয়েছিল দুই লাখ ২৯ হাজার ৫৮৩ কোটি টাকা।

এত বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও সড়ক ও বন্দরের মান সন্তোষজনক নয়। তৎকালীন সরকার উন্নয়নের নামে লুটপাট করেছে, পর্যাপ্ত সমীক্ষা ছাড়াই ব্যক্তি ও স্বার্থান্বেষী মহলকে সুবিধা দিতে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। অনেক প্রকল্প এখন বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, এর মধ্যে কর্ণফুলী টানেল এবং পদ্মা সেতুর রেললাইন প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রকল্প যেন আর না হয়, সে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে এবং টেকসই, জনবান্ধব উন্নয়নের দিকে অগ্রসর হতে হবে।

শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) ও চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ (সিইএবি) যৌথভাবে আয়োজিত ‘সংস্কার ও টেকসই উন্নয়নের সমন্বয়ে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। বিএসআরএফের সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হকের সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি ফসিহ উদ্দীন মাহতাব। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. একেএম আতিকুর রহমান। বক্তব্য রাখেন রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. সারদার শাহদাত আলী, সিইএবির প্রধান উপদেষ্টা কি চাংলিয়াং, বুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শারমিন নিলোর্মি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা ও মো. মাহিন সরকার।

উপদেষ্টা মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ভবিষ্যতে প্রকল্প গ্রহণের আগে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন ভালোভাবে যাচাই করা হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের কাছে জনগণের আশা আকাশচুম্বী এবং আমাদের কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব নিতে হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা বলেছে, আমরা দায়িত্ব নিয়েছি, এবং এক হাজারের বেশি শহিদের আত্মত্যাগের প্রতি দায়বদ্ধ।

মো. সারদার শাহদাত আলী বলেন, উন্নয়নের ৯৯ শতাংশ চাপিয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে প্রকল্পগুলোর কার্যকারিতা সীমিত হয়। নতুন প্রকল্পের জন্য জনমানুষের মতামত নিয়ে পরিকল্পনা করা হবে।

ড. আকতার মাহমুদ বলেন, বিভিন্ন ভুল প্রকল্প যেমন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, পানির স্রোতের বিপরীতে রেললাইন নির্মাণ এবং দাশেরকান্দি পানি শোধনাগারের মতো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। সঠিক সমীক্ষার অভাবের কারণে প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ বেড়ে গেছে।

ড. শারমিন নিলোর্মি গ্রামীণ অবকাঠামোর রক্ষণাবেক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। উমামা ফাতেমা বলেন, উন্নয়নের নামে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে এবং শেখ হাসিনার সরকারের পরিকল্পনায় অন্যান্য বিভাগের সমন্বয় করা হয়নি।

মো. মাহিন সরকার কর্ণফুলী টানেলের লোকসানের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের জন্য কতটুকু ভূমিকা রাখবে, সেটি দেখতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের উচিত ঋণের বোঝা কমানোর পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রমকে কার্যকর করা এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারিয়ে না ফেলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *